সেই গম গুদামে ঢুকতে দেননি এমপি
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা নিম্নমানের গম নিজের নির্বাচনী এলাকার খাদ্যগুদামে ঢুকতে দেননি কুষ্টিয়ার এক সংসদ সদস্য।
urgentPhoto
আজ শনিবার ভোর রাতে ট্রাকভর্তি গম এসে পৌঁছায় কুমারখালী উপজেলা খাদ্যগুদামে। সকালে এসব গম গুদামজাত করার কথা ছিল। তার আগেই বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রউফ সেখানে গিয়ে গম গুদামে না ঢোকানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
নিম্নমানের গম গুদামে এসেছে শুনে এলাকার শত শত মানুষ সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। তাঁরাও এ গম গুদামজাত করার প্রতিবাদ করেন।
খুলনার গুদাম থেকে এসব গম পাঠানো হয়েছে। ভোর রাতেই ট্রাকগুলো কুমারখালীতে এসে পৌঁছায় বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান গম বহনকারী ট্রাকের চালক সুন্নত আলী।
কুমারখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে জানতে পারি নিম্নমানের গম কুমারখালীতে গুদামজাত করা হবে। জানার পরই আমরা বিষয়টি সংসদ সদস্য আবদুর রউফকে অবহিত করি। আমরা তাঁকে জানাই, এ গম খাওয়ার অনুপযোগী। এটা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ গম গুদামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’
সংসদ সদস্য আবদুর রউফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা গমও এখানে আনলোড করতে দেব না। আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি এটা নিম্নমানের গম। এটা গোডাউনে যাবে না। খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ গম ফেরত পাঠাব। এ ছাড়া আমি গুদাম থেকে নিম্নমানের চালের নমুনাও সংগ্রহ করেছি।’
কুমারখালী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন কাজের বিপরীতে খুলনা থেকে এসব গম পাঠানো হয়েছে। এ গমগুলো ব্রাজিল থেকে আমদানি করা।
সম্প্রতি ব্রাজিল থেকে আনা গমের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘দেখতে খারাপ’ এসব গম খাবারের অনুপযোগী। গমের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
তবে গত শনিবার (২১ জুন) সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরে নিম্নমানের গম আমদানির বিষয়ে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।
এরপরই গত সোমবার পচা গম আমদানির হোতাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় বিএনপি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের পদত্যাগও দাবি করে দলটি।
এর পর গত ২৪ জুন খাদ্য মন্ত্রলালয় জানায়, ব্রাজিল থেকে আমদানীকৃত গমের পুনঃপরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী পচা কিংবা মানুষের খাবার অনুপযোগী কোনো গম পাওয়া যায়নি। চুক্তিতে বর্ণিত নির্দেশ মোতাবেক এ গম পাওয়া গেছে।’
এরপর গত ২৯ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পচা গম আমদানি করা হয়েছে দাবি করে তা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের বিবরণে বলা হয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্রাজিল থেকে সম্প্রতি সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন পচা-নষ্ট গম আমদানি করা হয়েছে।
এসব গম মানহীন ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার ফলে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম অনেক নিম্নমানের।