‘ইয়াবা রেখে’ ইন্টার্ন চিকিৎসক গ্রেপ্তার, এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
বরগুনায় ইয়াবা রেখে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার এবং সেই সময় তাঁর মা ও দুই বোনের ওপর হামলার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু জাফরকে প্রধান আসামি করে আজ সোমবার সকালে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন সদর উপজেলার পশ্চিম হেউলিবুনিয়া গ্রামের মো. শাহ আলম সরদারের স্ত্রী হালিমা বেগম। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে তা বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জুলফিকার আলী খান।
মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, বাদী হালিমা বেগমের জামাতা সদর উপজেলার নলী মাইঠা গ্রামের মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জের ধরে খলিলুর রহমানের যোগসাজশে গত শনিবার রাত ১০টার দিকে পশ্চিম হেউলিবুনিয়া গ্রামে হালিমা বেগমের বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে শামীম হোসেন মুসা সরদারকে (২৭) ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ধরে নিয়ে যান গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. আবু জাফর। এ সময় বরগুনার বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যাবসায়ীও এসআই আবু জাফরের সঙ্গে ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে মুসা সরদারের কাছ থেকে ১০০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে নাটক সাজিয়ে পরের দিন রোববার সকালে বরগুনা থানায় একটি মামলা করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ বিষয়ে বাদী হালিমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাঁর ছেলে শামীম হোসেন মুসা সরদার ইয়াবা তো দূরের কথা, কোনোদিন ধূমপানও করেননি। তিনি বরগুনা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে চার বছরের ডিএইচএমএস কোর্স শেষ করে বর্তমানে ইন্টার্নি করছেন। তিনি বরগুনার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগও নেই।
হালিমা বেগম আরো জানান, শনিবার রাত ১০টার সময় তাঁরা যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখন তাঁদের ঘরে তাঁর জামাতা খলিলুর রহমান ও তাঁর সহযোগী রাজু ওরফে টায়ার রাজু, জিসানসহ পাঁচ-ছয়জনের একটি দল জোর করে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা তাঁর ছেলে মুসা সরদারকে হাতকড়া পরিয়ে জোর করে ধরে ঘরের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি (হালিমা বেগম) ও তাঁর দুই মেয়ে মরিয়ম (১৬) ও সাথী (২৬) তাদের বাধা দিলে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবু জাফরও তাঁদের ঘরে প্রবেশ করে হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে এসআই আবু জাফর তাঁর দুই মেয়ে সাথী ও মরিয়মের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁদের আহত করেন বলে জানান হালিমা বেগম।
বরগুনা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শামীম হোসেন মুসা সরদার তাঁর কলেজ থেকে চার বছরের ডিএইচএমএস কোর্স শেষ করে বর্তমানে ইন্টার্নি করছেন। মুসাকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তিনি বরগুনার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগও নেই। ইয়াবা তো দূরের কথা, মুসা ধূমপানও করেন না বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে এসআই মো. আবু জাফর বলেন, ঘটনার দিন তাঁর দুজন সোর্স ও ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য মুসাকে ১০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কেউ আহত হতে পারে বলে তিনি জানান।
বরগুনার গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।