দুর্বল নর্দমা ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পৌর এলাকা প্লাবিত
টানা চার দিনের ভারি বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পৌরসভা এলাকায় নর্দমা ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। দুর্ভোগে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ সীমাহীন কষ্টের মুখে পড়েছে। বর্ষণ ও প্লাবনে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার ঈদের বাজারও। এর প্রভাব পড়েছে মার্কেটগুলোতে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
ফারুক আহমেদ পিনু, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া শহরের অধিকাংশ এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। ঈদের কেনাবেচাতেও নেমেছে ধস। রাস্তায় পানি জমে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে।
কুষ্টিয়া পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তা ও নর্দমা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তড়িঘড়ি করে বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকায় সাড়ে আট কোটি টাকার নর্দমা ও রাস্তার কাজের দরপত্র দেওয়ায় এ দুর্ভোগ বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘এই দরপত্রে শহরের পানিনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে কোনো বরাদ্দ না রেখে শহরের বাইরে কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নর্দমা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়েছে যার ফলে পৌরবাসীকে এই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।’
কুষ্টিয়া জি কে হাইস্কুলের শিক্ষিকা রাফিয়া আফরোজ ইরা বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই কুষ্টিয়া শহর চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাজারে বা কর্মস্থলে যেতে খুব অসুবিধা হয়।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানিয়েছেন, বৃষ্টির পানিতে তাঁর সরকারি বাসভবন প্লাবিত হওয়ায় হাঁটুজল পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
রবিউল ইসলাম, বাগেরহাট : টানা চারদিনের ভারি বর্ষণে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলা সদরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। অবিরাম বর্ষণে জেলা নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিডর ও আইলাবিধ্বস্ত শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবারের রান্না-বান্না বন্ধ হয়েছে। শহরের কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয়ের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে।
পুকুর, মাছের ঘের থেকে শুরু করে তলিয়ে গেছে বসতঘরও। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নর্দমা ব্যবস্থা না থাকা এবং সরকারি খালগুলো ভরাট ও দখল হওয়ায় বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। শহরের পৌরসভা রোড, খারদ্বার, বাসাবাটি, মিঠাপুকুর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর এখন হাঁটুপানি।
জেলার মংলা, কচুয়া, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভারি বর্ষণে শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ঘরের মধ্যে ডুকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে জেলার নয়টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আমনের বীজতলা, পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে।’
রেজ আন উল বাসার তাপস, মেহেরপুর : টানা বৃষ্টিতে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পৌর এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। শহরের চক্রপাড়া ও হঠাৎপাড়ায় নর্দমা ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক শ পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে নর্দমা ব্যবস্থার সংস্কার না হওয়ায় কেশ্যবপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, হালদারপাড়া, শেখপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ার অবস্থা একই রকম।
এদিকে ঈদের কেনাকাটায় বাধা সেজেছে টানা তিনদিনের বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টির কারণে মার্কেটগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। অলস সময় পার করছেন দোকানিরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের কেনাকেটা হয় সাধারণত সকাল আর সন্ধ্যায়। টানা বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না। ফলে প্রত্যাশিত বিক্রি হচ্ছে না তাঁদের।
আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ : টানা বর্ষণে নওগাঁ শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও নর্দমা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। মাত্র আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়।
নওগাঁ শহরের প্রধান সড়কে সরিষাহাটির মোড় থেকে মুক্তির মোড় হয়ে কাজির মোড় পর্যন্ত, দয়ালের মোড়, উপজেলা পরিষদের সামনে পানি জমে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া বৃষ্টির ফলে কালীতলা সড়ক, ডিগ্রির মোড়, শহিদুলের মোড়, বিহারি কলোনি, কাঁচাবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন মহল্লা কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। শহরের পার-নওগাঁ, রজাকপুর, মেরী গোল্ডপাড়াসহ কোনো কোনো এলাকায় বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে শহরের নিম্ন এলাকার বাসিন্দারা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জলাবদ্ধতায় পথচারীসহ রিকশা ভ্যান, অটোরিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।