সিলেটের পর এবার কুমিল্লায় নৃশংসতা
দেশজুড়ে নৃশংসতা যেন থামছেই না। সিলেটে কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার বিচারের দাবীতে সারা দেশ যখন উত্তাল, এরই মাঝে ডাকাত সন্দেহে পায়ের রগ কেটে শামসুল ইসলাম মনির নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। নিহত মনিরের বাবার দাবি, তাঁকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যার পর ডাকাত আখ্যা দিয়েছে স্থানীয় একটি মহল। গত মঙ্গলবার ভোররাতে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে নির্মম এ ঘটনা ঘটে।
কিশোর রাজন হত্যার মতোই মনিরকে খুনের এ ঘটনার বিভিন্ন ছবি ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় শুরু হয়। নিহত মনির মুরাদনগরের কাজিয়াতল গ্রামের মুসলেম উদ্দিনে ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার সন্ধায় কুমিল্লা মুরাদনগর থানায় মোট ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, মামলার অভিযোগে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার কাজিয়াতল গ্রামের আদম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী নিহত শামসুল ইসলাম মনিরকে পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে ডাকেন। মনিরকে বলা হয়, ঈদের আগে ওই আদম ব্যবসায়ী ঢাকা যাবেন, তাই যাতে টাকা নিয়ে আসেন মনির। এরপর সেহরি খেয়ে মনির মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর মনিরের পায়ের রগ কেটে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় মোহাম্মদ আলীর কথামতো মসজিদের ইমাম আবুল হাসান গ্রামে ডাকাত আসার খবর মাইকে প্রচার করেন।
মিজানুর রহমান আরো জানান, এদিকে গতকাল বুধবার সকালে মুরাদনগরের কাজিয়াতল গ্রামে জনতার পিটুনিতে ডাকাত মারা গেছে খবর শুনে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুল আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মনিরকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মোছলেম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘মনিরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ছয় মাস আগে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। প্রতিশ্রুতিমতো বিদেশে না নিতে পারায় টাকা ফেরত দেওয়ার নামে নানা টালবাহানা করে মোহাম্মদ আলী। সর্বশেষ টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে মাইরাই ফেলল আমার ব্যাটারে।’ বলতে বলতে চিৎকার করে কেঁদে ফেলেন মোছলেম উদ্দিন।
এদিকে ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকায় পুলিশ কাজিয়াতল গ্রামের মসজিদের ইমাম আবুল হাসানকে গত রাতে তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চরহনিয়া গ্রাম থেকে আটক করে। ওসি মিজানুর রহমান জানান, অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।