মহাসড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ গতির পার্থক্য
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শত ঝক্কি-ঝামেলা আর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যায় মানুষ। কিন্তু কারো কারো সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে সময় নেয় না। একটা দুর্ঘটনা। স্বজনের মৃত্যু। ঈদের খুশিতে মুহূর্তেই বিষাদের কালো ছায়া।
ঈদের আগে ও পরে গত ১০ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত আড়াইশ মানুষ। এসব সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় দুই যানের মুখোমুখি সংর্ঘষ,নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, চাপা দেওয়া এমনকি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কার কারণেই বেশির ভাগ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের মতো কোনো উৎসবে যাত্রীদের বাড়তি চাপের কারণে যাত্রার সময়সূচি ঠিক রাখতে চালকদের বেপরোয়া গতি আর মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের অবৈধ উপস্থিতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। গাড়ি চালক,মালিক, যাত্রীদের সচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইস্টিটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘মহাসড়কে গতির জন্য যতটা না দুর্ঘটনা ঘটে, গতির পার্থক্যের জন্যই দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ একজন ৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে, আরেকজন পাঁচ কিলোমিটার গতিতে, এই যে একই রাস্তায় মিশ্র গতি, এ মিশ্র গতির ফলে কিন্তু দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে।’ তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের অসঙ্গতিপূর্ণ অসংখ্য ব্যবহার চলে আসছে। গাড়ি পার্কিং হচ্ছে, পথচারী চলে আসছে, আশপাশের খালি জায়গায় বাণিজ্যিক বিপণিবিতান গড়ে উঠছে- এতে করে পরিবেশ বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, সাংঘর্ষিক হয়ে যায়, যাঁরা নিরবচ্ছিন্ন দ্রুত গতিতে চলতে চায়।’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ বা ব্ল্যাক স্পট আছে, তাতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে আশানুরূপ ফল মিলেছে জানিয়ে অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে ১৪১টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ মহাসড়কের দুর্ঘটনা ঘটে মাত্র চার শতাংশ রাস্তায়। তাহলে আমরা জানি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলো। জানা জায়গায় দাওয়াই দিলে তাৎক্ষণিক বেনিফিট পাওয়া যাবে।’
এর আগে গত ২১ জুলাই বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে বেপরোয়া গতির গাড়ি চালানোকেই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করেন। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীকে মহাসড়কে কম গতির ব্যাটারিচালিত গাড়ি চলতে না দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর পর ২২ জুলাই মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
উৎসবের সময় তো বটেই- সারা বছরই মহাসড়কগুলোয় কঠোরভাবে আইনপ্রয়োগ করলেই একমাত্র দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।