ত্রিমুখী উদ্যোগে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও জাতিসংঘের ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত, সে দেশে নাগরিকত্ব, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপুরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আর এ জন্য বাংলাদেশ যে ত্রিমুখী উদ্যোগ নিয়েছে তা হচ্ছে, শেখ হাসিনার শান্তি উদ্যোগ, কূটনৈতিক তৎপরতা ও গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সঠিক চিত্রায়ন।
গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এ সভার আয়োজন করে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারসহ জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, মীর হোসাইন আখতার ও নুরুল আখতার সভায় বক্তব্য রাখেন।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির মঙ্গলবার দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সু চির বক্তব্য রোহিঙ্গা সমস্যার সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি। শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে তাঁর শর্তদান গ্রহণযোগ্য নয়। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার বিষয়টিও তাঁল বক্তব্যে ফুটে ওঠেনি। কিন্তু আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রিতসহ সকল রোহিঙ্গা যে মিয়ানমারের নাগরিক তা তার বক্তব্যে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।’
হাসানুল হক বলেন, ‘আড়াল করার অপচেষ্টা করে লাভ নেই, সমগ্র বিশ্ব জানে রাখাইনে গণহত্যা ও নির্যাতন করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিতাড়ন করা হয়েছে। এই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করতে হবে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মর্যাদায় নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।’
‘বিশ্বব্যাপী যখন বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে, তখন বিএনপি, খালেদা জিয়া ও জামাতীচক্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির রোহিঙ্গাকরণ করছে’ উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িকতার জিগির তোলা এমনকি যুদ্ধের উস্কানি দেয়ার মতো কূটরাজনীতির কৌশলে লিপ্ত রয়েছে তারা। এবিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সামরিক নয়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। প্রতিবেশি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন ও গণহত্যার ফলে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত যে চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করে শেখ হাসিনা তাদের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসাসহ মানবিক সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মিলন হলে টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমের প্রশংসা করেন ও ধন্যবাদ জানান। সরকারের মানবিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে মন্ত্রী তাদের বস্তুনিষ্ঠ প্রচার অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান।
তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ, আরটিভির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আশিক রহমান, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল ইসলাম, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামদুল হক, চ্যানেল আই-এর প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রণব সাহাসহ গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।