পুলিশ করছে অভিযোগ, এমপি গাইছেন সাফাই
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার বাসায় তল্লাশি চালানোর প্রতিবাদে আজ রোববার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতারা। তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। তিনি শ্রীনগর, লৌহজং ও সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শামসুজ্জামানকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করতে সময় বেঁধে দিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
আজ রোববার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ঢাকা-দোহার সড়কে পোস্ট অফিসসংলগ্ন এএসপির কার্যালয়ের সামনে সুকুমার রঞ্জন ঘোষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল ও পরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে হাতমাইক দিয়ে বক্তব্য দেন সুকুমার রঞ্জন ঘোষ।
শ্রীনগরের একাধিক পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি নেছার উল্লাহ ও উপজেলার পাটাভোগ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মো. অনিকের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভয়ে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে সাহস পান না। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশ খবর পায়, দুই নেতার কাছে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পুলিশ উপজেলার সমষপুর গ্রামে নেছারের বাসা ও পাটাভোগে অনিকের বাসায় অভিযান চালায়। কিন্তু টের পেয়ে তাঁদের দুজনের কেউই বাসায় ছিলেন না। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কিছু না পেয়ে পরে চলে যায়।
এই তল্লাশির ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সংসদ সদস্য সুকুমার ঘোষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে এএসপি শামসুজ্জামানের প্রত্যাহার দাবি করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে এএসপি শামসুজ্জামান অভিযোগ করেন, নেছার ও অনিক সব সময় পুলিশের কাজে বাধা দেন। চোরাই কোনো মোটরসাইকেল ধরলেই তাঁরা তদবির করে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। না ছাড়লে তাঁরা মুঠোফোনে লাউড স্পিকার দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের গালাগাল করতেন এবং অন্যদের শোনাতেন।
এএসপি আরো অভিযোগ করেন, অনিক সব সময় ১০-১২ জন ছেলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতো করে ঘুরে বেড়ান এবং লোকজনকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখান। কিছুদিন আগে আমাদের এক কর্মকর্তাকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখান। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার তথ্য পেয়ে গতকাল রাতে অভিযান চালানো হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের বক্তব্য জানতে ফোন করলে ‘অনিক ভালো ছেলে’ বলে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, অনিকের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার আমাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের। আমি তাঁর সংসদ সদস্য। আমি পুলিশের বিরুদ্ধে যাব কেন। আমি কোনো বিক্ষোভে যাইনি। আমার কোনো কর্মসূচিও ছিল না। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় দলীয় কর্মীদের দেখতে পাই। আমি গাড়িতেই ছিলাম।’ বলে দাবি করেন তিনি।
১৫ দিনের মধ্যে এএসপিকে প্রত্যাহারের সময় বেঁধে দেওয়া প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, ‘এটি আংশিক সঠিক।’
অনিকের ব্যাপারে পুলিশের কাজে বাঁধা ও গালাগাল করার অভিযোগ রয়েছে জানালে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘অনিক ভালো ছেলে। তাঁর ব্যাপারে অভিযোগ মিথ্যা।’
এরপর বলতে থাকেন, ‘শোনেন আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কম কথা বলি। আমি পুলিশের বিরুদ্ধে না। পুলিশের ভেতর ড্রেস পরা একজনের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক), পুলিশ সুপার সবার সাথে কথা বলেছি।’
সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ছাত্রলীগ নেতা অনিককে ভালো ছেলে বলে দাবি করলেও একমত নন মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ। তিনিও এনটিভি অনলাইনকে জানান, নেছার উল্লাহ ও অনিক প্রায়ই পুলিশের কাজে বাধা দেন। অনিকের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে গালাগাল করেন।