বান্দরবানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩৮ টাকা করে বরাদ্দ!
বান্দরবানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১২৫ টন খাদ্যশস্য এবং দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ৫৫ টন খাদ্যশস্য এবং ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের ভাগ্যে জুটছে মাত্র আড়াই কেজি করে চাল আর পাঁচটি করে টাকা।
তবে বান্দরবানের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানিয়েছেন, জেলায় বন্যা দুর্গত ছয় হাজার ৪৮১টি পরিবারের ভাগ্যে জুটবে মাত্র ৩৮ টাকা করে।
জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বান্দরবানে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনো সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দরবানের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানির ওপর দিয়ে দুই-একটা যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে পাহাড় ধসের কারণে রুমা ও থানচি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে চারদিন ধরে।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান জেলা শহরের মেম্বারপাড়া, আর্মিপাড়া, বালাঘাটা, ইসলামপুর, উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি এবং আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সড়ক ও বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলো থেকে পানি ধীরে ধীরে নামছে।
এদিকে টানা বর্ষণের কারণে বান্দরবানে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। ধসে সড়ক ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দুই দফায় বন্যা এবং বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ার আশঙ্কায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে।
হাফেজঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কবির জানান, বৃষ্টির কারণে রাতে বিকট শব্দে পাহাড় ধসে পড়েছে। পাহাড় ধসে শৌচাগার ও ঘরের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির সময় কেউ ঘুমাতে পারে না, পরিবার-পরিজন নিয়ে ধস আতঙ্কে রাস্তায় গিয়ে খোলা ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়।
এদিকে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়া এলাকায় প্রধান সড়কে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একট গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে পানির ওপর দিয়ে চলাচল করছে।
বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী ২০টি ঘরবাড়ি পানির স্রোতের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মিলছে না ত্রাণ, খাবার ও বিশুদ্ধ পানিও- অভিযোগ দুর্গতদের। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর দাবি বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও বন্যার পানি নামছে বলে জানিয়েছেন বান্দরানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান।