এখনো বিচ্ছিন্ন নীলগিরি, রুমা ও থানচি
অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধসে ছয়দিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র নীলগিরি ও চিম্বুক সড়কে। এ ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে রুমা ও থানচি উপজেলা।
পাহাড় ধসে সড়ক পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থবিরতা নেমে এসেছে উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্যে। আজ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে দুই পাশে আটকা পড়েছে অসংখ্য গাড়ি। ঝুঁকি নিয়ে ধসেপড়া পাহাড়ের নিচ দিয়ে কাদামাটি ও জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
এলাকাবাসী ও সেনা প্রকৌশল শাখা জানায়, গত বুধবার থেকে অবিরাম বর্ষণের সময় বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে বান্দরবান-নীলগিরি-চিম্বুক সড়কের নয় মাইল নামক স্থানে প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক সম্পূর্ণ ভেঙে ধসে পড়েছে।
সড়ক ধসে যাওয়ার ঘটনাস্থলের কোনো কোনো স্থানে রাস্তার চিহ্ন খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে সড়কের সংস্কারকাজ আরম্ভ করতে পারেনি সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখা। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখা ১৯ ইসি উপ-অধিনায়ক মেজর সাদেক মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, বৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে ধসে গেছে প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক। সড়কটি নতুনভাবে তৈরির ম্যাপ তৈরিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কের সংস্কারকাজ আরম্ভ করা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি থামলেই সাময়িকভাবে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য কোনো একটি ব্যবস্থা করা হবে। সড়কটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে কিছুদিন সময় লাগবে।
নয় মাইল এলাকার বাসিন্দা উথোয়াই চিং ও মাধুরী মারমা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রুমা ও থানচি উপজেলার। বাগানের উৎপাদিত পণ্য কাঁধে নিয়ে কাদামাটি ও জঙ্গলের ওপর দিয়ে হেঁটে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পর্যটকরা যেতে না পারায় জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে না।
পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ বাহাদুর, টিটু দাশ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, পাহাড় ধসে সড়ক বিধস্ত হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্র নীলগিরি ও চিম্বুক যেতে পারছে না পর্যটকরা। রুমা ও থানচি উপজেলা সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পর্যটকরা যেতে না পারায় পর্যটকবাহী দেড় শতাধিক গাড়ির চালক ও তাঁদের সহকারী স্টেশনে বসেই অলস সময় কাটাচ্ছে। এভাবে আরো কিছুদিন চললে পরিবহন শ্রমিকরা না খেয়ে মরবে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন জানান, কয়েকদিনের অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান-থানছি সড়কের নীলগিরি, জীবননগর, বলিপাড়া এবং থানছি-আলীকদম সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, বড় বড় গাছপালা ও পাথর পড়ে রয়েছে।
পাহাড় ধসে সড়কে মাটি জমে যাওয়ায় এবং সড়ক ধসেপড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সড়কের উভয়দিকে অনেক যানবাহন আটকা পড়েছে। সড়ক যোগযোগ বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বিকল্প পথে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান ইউএনও।
গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে বন্যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। পাহাড় ধসে জেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। শত শত একর ধানের বীজতলা ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। বান্দরবান-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।