পানিতে শার্শার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানির চাপে যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। ভেসে গিয়েছে দুই শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার হেক্টর আমন ও আউশ ফসল।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শার্শা উপজেলার কায়বার দাদখালীর খাল, বাহাদুরপুরের কোদলা নদী, লক্ষ্মণপুরের কাশীপুর ও নারকেলবাড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ভারতের গাঙ্গুলিয়ার মোস্তাবপুর সেতু হয়ে বেতনা নদী দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রতিদিন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর পানি উপজেলার বাহাদুরপুর, কায়বা, ডিহি, পুটখালী, গোগা ও লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ভারতীয় সীমান্ত সংযোগ খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও পাটা বাঁধের কারণে প্লাবিত এলাকার পানিনিষ্কাশিত হচ্ছে না। ফলে এ উপজেলায় এবার পুটখালী, কায়বা, ডিহি, লক্ষ্মণপুর, গোগা ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে আউশ ও আমন চাষ শতভাগ ব্যাহত হবে। এ ছাড়া শার্শা, নিজামপুর, বাগ আঁচড়া, উলাশী ও বেনাপোল ইউনিয়নে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ আউশ ও আমন চাষ কম হবে।
উজান থেকে আসা পানির চাপে ও টানা বর্ষণের ফলে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সালাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফউজ্জামান ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাহাদুরপুর ইউনিয়নসহ সীমান্তের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে ইছামতির নদীর উপচে পড়া পানির চাপে তলিয়ে গেছে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সর্বাংহুদা সেতু। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সর্বাংহুদা, রঘুনাথপুর ও ঘিবার সাতটি গ্রামসহ নয় গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার। প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছে ছোট বড় ৪০টি বিলের আউশ ও আমন ধান। ভেসে গেছে দুই শতাধিক ঘের ও পুকুরের মাছ।
বাহাদুরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কায়বা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস, পুটখালী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল গফ্ফার সরদার, লক্ষ্মণপুর ইউপির চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন ও ডিহি ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ও ভারত থেকে আসা উজানের পানির চাপে ইছামতি নদীর পানি সীমান্তবর্তী ‘দর’ সেতু, দাদখালীর সেতু, শিকারপুর ও নারকেল বাড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থানে মোস্তাবপুর সেতু দিয়ে ডিহি ও লক্ষণপুরসহ প্রতিটি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
শার্শা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার বলেন, উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে ভেসে গেছে দুই শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার হেক্টর আমন ও আউশ ফসল। এ ছাড়া ৬৫৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা ও ৩৩৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, কয়েকজন ব্যক্তির স্বার্থে ব্যাপক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া যারা পাটাবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে এবং পানিপ্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।