সবার থেকে আলাদা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক
অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। শত ব্যস্ততা আর নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও কত যে কী করার আছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। একজন বিজয় বসাকের নেতৃত্বে ভিন্নতায় অনন্য এখন বরগুনা জেলা পুলিশ। ইভ টিজিং, জঙ্গিবাদ ও মাদক বাণিজ্যসহ সকল প্রকার অপরাধ নির্মূলে যাঁর সাহসী ভূমিকা এরই মধ্যে নজর কেড়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। অসংখ্য ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে পাঁচ-পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারের সম্মান পেয়েছেন তিনি।
পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক
জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের রোগীদের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে ২০১৬ সালে স্থাপন করা হয় পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক। জেলার ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্যের রক্তের গ্রুপ এবং একাধিক জরুরি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করা হয়েছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মাঝে। পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক জরুরি রোগীদের জন্য এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। প্রতিজন রক্তদাতা পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় সম্মাননা পুরস্কারসহ একটি টি-শার্ট, একটি প্রীতি মগ ও ১০টি ডাব দিয়ে অনুপ্রাণিত করা হয়। দ্বিতীয়বার রক্তদাতা সদস্যকে প্রেরণা দিতে পুলিশ সুপারের ব্যক্তিগত খরচে দেওয়া হয় নানা প্রণোদনা পুরস্কার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যরাই রক্ত দিয়ে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশই সবার আগে রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলেছে। এ ধারাবাহিকতায় উপকূলীয় বরগুনার দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে জনগণের সঙ্গে পুলিশের যেমন সম্পর্কের উন্নয়ন হবে, তেমনি সাধারণ দরিদ্র মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ আরো বাড়বে।’ তিনি জানান, ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত ৪০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন তিনি।
জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র
দরিদ্র, অসহায় এবং নির্যাতিত নারীদের ভোগান্তি লাঘবে বরগুনা জেলা পুলিশের একটি সফল আয়োজনের নাম জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্যাতনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন বরগুনার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার শতাধিক দরিদ্র অসহায় নারী। জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র এখন বরগুনার অসহায়, দুঃস্থ ও নির্যাতিত নারীদের আস্থার প্রতীক। একটি অনুকরণীয় সাফল্য। স্থানীয় নারী নেত্রী, সমাজসেবক এবং আইনজীবীসহ জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেকোনো জেলার চেয়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নারী নির্যাতনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। নানা কারণে এ জেলায় নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যাও অন্য যেকোনো জেলার চেয়ে অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবন এবং পারিবারিক কলহের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে এখানে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেঙে যায় সংসার। মামলা হয় নারী নির্যাতনের। মাসের পর মাস ধরে চলে মামলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অধীনে এ সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী উপপরিদর্শক (এসআই)। রয়েছে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি অভিযোগ গ্রহণ কমিটি। এ ছাড়া সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্থানীয় সমাজসেবক, উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও নারীনেত্রীসহ ২৫ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক দলও রয়েছে জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের সঙ্গে। ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা পুলিশের এ জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. হাছানুজ্জামান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জুলফিকার আলী খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিবাদ প্রাথমিকভাবে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হলে তার ক্ষতির পরিমাণও কম হয়। আদালতেও বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। উদ্যোগটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে নারী নির্যাতনের হার কমে আসবে। কমবে মামলার জটও।’
জেলা পুলিশের জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রথম দিকে তিনি একাই জাগরণীর সকল কাজ সমন্বয় করতেন। অধিকাংশ অভিযোগের কার্যকরী সমাধানের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এখন এত বেশি অভিযোগ জমা পড়ছে যে তা সামলাতে এখন অতিরিক্ত আরো দুজন সহকারী উপপরিদর্শক এবং একজন কনস্টেবল নিযুক্ত করা হয়েছে। এসআই জান্নাত আরো বলেন, ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এ অবধি মাত্র জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁরা ২৫১টি পারিবারিক নির্যাতন, ১০টি যৌতুক, ১৯টি ইভ টিজিং, ২১টি বাল্যবিবাহসহ চার শতাধিক অভিযোগের কার্যকরী সমাধান করেছেন। পাশাপাশি সাতটি অভিযোগকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে, ১৫টি অভিযোগ লিগ্যাল এইডে পাঠানো হয়েছে এবং এখনো ২৮টি অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
‘যে মুখে ডাকি মা, সে মুখে মাদককে বলি না’
মাদকবিরোধী মমতাময়ী মায়ের প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পাশাপাশি মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান নিয়ে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক নিজেই রচনা করেছেন একটি স্লোগান- ‘যে মুখে ডাকি মা, সে মুখে মাদককে বলি না’। এ স্লোগানকে সামনে রেখে পাড়া-মহল্লায়, গ্রামেগঞ্জে, স্কুল-কলেজে কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনা জেলা পুলিশ। এ ছাড়া ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই একসাথে’ স্লোগানে বরগুনার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভ টিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনা জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে স্কুলে স্কুলে আয়োজন করা হচ্ছে দেশপ্রেম ও ক্যারিয়ার ভাবনাবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ভাবনা, মানবীয় গুণাবলির বিকাশ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস প্রদর্শন করা হয়।
জেলা পুলিশের এসব কর্মসূচি প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, জীবনের শুরু থেকেই তরুণ প্রজন্মকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলা সম্ভব হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বরগুনার ছয়টি উপজেলার ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীকে জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভ টিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর মাঝে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন সাজিদ সোবহান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রায় ৩৫ হাজার দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি পুলিশিং ও গ্রাম পুলিশ উন্নয়ন
১০ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় মাত্র ৬০০ পুলিশ পর্যাপ্ত নয়। নানা সীমাবদ্ধতার বিষয় ভাবনায় রেখে জেলার চারটি পৌরসভাসহ ৪২টি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে কমিউিনিটি পুলিশিং-এর স্থানীয় কমিটি। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে তুলতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের তৃণমূল নেতাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ধন্যবাদপত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দিয়ে আসছেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এসব নানামুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টার কারণে বরগুনার কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গতিশীল বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল। এ ছাড়া জেলার ছয়টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে ধারাবাহিকভাবে ‘ওপেন হাউস ডের’ আয়োজন করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার স্থানীয় নেতাদেরর সঙ্গে আলোচনা করে মাদক অপরাধসহ সকল প্রকার অপরাধ দমনে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা করেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এসব সভায় সরাসরি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও মতামত নেন তিনি। পরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত সেসব সমস্যা সমাধানে নির্দেশ দিয়ে তিনি তা নিয়মিত মনিটরিং করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০ থেকে ১২ জন গ্রাম পুলিশ নিযুক্ত রয়েছে। বরগুনা জেলার ৪২টি ইউনিয়ন পরিষদে সে হিসেবে পাঁচ শতাধিক গ্রাম পুলিশ রয়েছে। এসব গ্রামপুলিশকে আরো বেশি দায়িত্বসচেতন ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে নিয়মিত মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আসছে জেলা পুলিশ। পাশাপাশি পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁদের আগ্রহী করে তুলতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন পুরস্কার।
থানাহাজতে স্যানিটারি ন্যাপকিন
থানাহাজতে নারী হাজতিদের জন্য সারা বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের প্রথা চালু করেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এ ছাড়া নারী পুলিশ ও পুলিশ পরিবারের প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতায় পুলিশ সুপার বিজয় বসাক নিজ উদ্যোগে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংগঠন মেরী স্টোপসের সহযোগিতায় পুলিশ লাইন অডিটোরিয়ামে আয়োজন করেন প্রজনন স্বাস্থসেবাবিষয়ক কর্মশালা। কর্মশালায় বরগুনা জেলায় কর্মরত সকল নারী পুলিশসহ পুলিশ পরিবারের নারী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একাধিক নারী চিকিৎসক এবং মেরী স্টোপস ক্লিনিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপকূলীয় উন্নয়ন সংগঠন ‘জাগো নারী’র প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, ‘বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে স্থাপিত পুলিশ লাইভ ব্লাড ব্যাংক দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। কমিউনিটি পুলিশিংকে ঢেলে সাজিয়ে নানামুখী সৃজনশীল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন তিনি।’
বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার
শুধু মানবিক গুণাবলির দিক দিয়েই নয়, পেশাগত দক্ষতায়ও তিনি এগিয়ে রয়েছেন অনেক দূর। কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছানো, হতদরিদ্র অসহায় নারীদের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুলে স্কুলে মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা ও ক্যারিয়ার ভাবনা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় পাঁচ-পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন বিজয় বসাক। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম), ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুবার তিনি অর্জন করেন আইজি ব্যাচ। বরগুনায় যোগদানের পর থেকেই বরগুনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি শক্ত হাতে। পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে বরগুনার তালতলীতে শিশু রবিউল হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি মিরাজকে গ্রেপ্তার করে ২১ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয় পুলিশ। চলতি বছর জুন মাসে বরগুনার বেতাগী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে স্বামীর সামনে শিক্ষিকা নির্যাতনের আলোচিত ঘটনার সাতদিনের মধ্যে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় বরগুনা জেলা পুলিশ। অতি সম্প্রতি বরগুনার কলেজছাত্রী মালা আক্তার হত্যাকাণ্ডের ১০ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় বরগুনা জেলা পুলিশ।
বিদ্যাপ্রিয় পুলিশ সুপার
বিজয় বসাকের অবসরের একটি বড় সময় কাটে বই পড়ে। কবিতা আবৃত্তিতেও রয়েছে তাঁর সমান পদচারণা। স্থানীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও রয়েছে তাঁর সমান অংশগ্রহণ। দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিজয় বসাক। নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রতিবছর কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করে তাদের হাতে নানাবিধ পুরস্কার তুলে দেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে তরুণ নেতৃত্বের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় বিভিন্ন ক্যাডারে উত্তীর্ণ স্থানীয় তরুণ ও তাঁদের অভিভাবকদের নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একজন মানুষ হিসেবে সব সময় গরিব-দুঃখী ও অসহায় শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
ব্যক্তি জীবনে বিজয় বসাক
ব্যক্তি জীবনে একজন ভালো স্পোর্টসম্যান বিজয় বসাক। নিজের বাড়ি এমনকি অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়েও বিজয় বসাকের রয়েছে চৌকস রুচি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ভবন এবং এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও আকর্ষণীয় পরিবর্তন এনেছেন তিনি। মূল ক্যাম্পাসে মায়ের কোলে শিশুর একটি দৃষ্টিনন্দন মনুমেন্ট তৈরি করেছেন তিনি। বাংলাদেশের যেকোনো জেলার তুলনায় বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও এর ক্যাম্পাস এখন অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন। ব্যক্তি জীবনের কথা বলতে গিয়ে বিজয় বসাক বলেন, দিনাজপুর জেলার অধিবাসী তিনি। বিভিন্ন সময়ে তিনি চাকরি করেছেন ফরিদপুর, নরসিংদী এবং সুনামগঞ্জ জেলায়। পারিবারিক জীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা উল্লেখ করে বিজয় বসাক বলেন, ছেলেমেয়েদের সুষ্ঠু বিকাশ ও সঠিক পরিচর্যার জন্য পরিবারের সবাইকে তিনি সব সময় সঙ্গে রাখার চেষ্টা করেন। বর্তমানেও তাঁর স্ত্রী সন্তান তাঁর সঙ্গে বরগুনায়ই অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি।
২০১৫ সালের ১৪ জুন পুলিশ সুপার হিসেবে বরগুনায় যোগ দেন বিজয় বসাক। জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলেন তিনি।