অ্যাটকোর সভাপতি কারাগারে
বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সভাপতি ও এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিন দফা রিমান্ড শেষে আজ সোমবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটে তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মাহবুবুর রহমান তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মোসাদ্দেক আলীর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, মামলার শুনানিতে বিচারক মাহবুবুর রহমান অ্যাটকোর সভাপতিকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন দেওয়ার কথা বলেন। শুনানির সময় বিচারক বলেন, ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে কারাবিধির ৯১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী মোসাদ্দেক আলী কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন পাওয়ার দাবিদার।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি, বুধবার মোসাদ্দেক আলীকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মিরপুর মডেল থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন। ওই দিন মিরপুর থানা পুলিশ অ্যাটকোর সভাপতির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু মোসাদ্দেক আলীর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৮ জানুয়ারি রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মিরপুর ২ নম্বর সেকশন থেকে ১ নম্বরে যাওয়ার পথে জনসেবা প্রকল্প অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খন্দকার রাজীব আহম্মেদ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মোসাদ্দেক আলীর বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পনা, অর্থায়ন, প্ররোচনা ও নাশকতার নির্দেশনার’ অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাতেই তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এর আগে বাড্ডা থানায় দায়ের করা গাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় মোসাদ্দেক আলীকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার আগে খিলগাঁও থানায় দায়ের করা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড নেওয়া হয় তাঁকে।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে টঙ্গীগামী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনজন দগ্ধ হন। এ ঘটনায় গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের মালিক নজরুল ইসলাম খিলগাঁও থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
১ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থেকে মোসাদ্দেক আলীকে আটক করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, মোসাদ্দেক আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডের ডিবি সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর একদিন পর গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় খিলগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মোসাদ্দেক আলীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানও পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা জানান।
এ ছাড়া মোসাদ্দেক আলীর মুক্তির দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও স্যাটেলাইট টিভি দর্শক ফোরাম নামে দুটি সংগঠন রাজধানীতে সমাবেশ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রবাসের সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতির্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মোসাদ্দেক আলীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছেন।