রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কম্বোডিয়ার সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন খাত নিয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ একটি চুক্তি ও নয়টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
আজ সোমবার সকালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পিস প্যালেসে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তোলেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের সাধ্যমতো আশ্রয়, খাদ্য দিচ্ছি।’
‘তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আমি রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠুভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
কম্বোডিয়ার সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব চুক্তি দুই দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পিস প্যালেসে পৌঁছালে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী হুন সেন পিস প্যালেসের প্রবেশদ্বারে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ অভ্যর্থনা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি সুসজ্জিত মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে কম্বোডিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তাঁদের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এর আগে পিস প্যালেসে যাওয়ার পথে শত শত স্কুল শিক্ষার্থী রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা নেড়ে এবং ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়।
এরপর পিস প্যালেসে উভয় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এবং হুন সেন কম্বোডিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে নমপেনে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের রাজকীয় স্মৃতি মূর্তিতে ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শেখ হাসিনা কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে কম্বোডিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যোগ দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহানুকের সঙ্গে রাজকীয় স্রোতা এবং কম্বোডিয়ান সিনেট প্রেসিডেন্ট সে চুহুম ও ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি প্রেসিডেন্ট হেং সেমারিনের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন।
তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেশে ফিরবেন।