টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
টানা বৃষ্টি ও বন্যায় বান্দরবানে রোপা আমন বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় প্রায় ৫৪২ হেক্টর জমির রোপা আউশ, রোপা আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি, জুমের ধান, আদা-হলুদ ও ফলদ বাগানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। এ ক্ষতি আগামী কয়েক বছরেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে চাষাবাদের আওতাধীন ৪৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির মধ্যে চাষকৃত ৫৪২ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ শতাধিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জেলার সাত উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১১ হেক্টর রোপা আউশ, ৭০ হেক্টর আমন বীজতলা, ১৭ হেক্টর রোপা আমন, ১৩২ হেক্টর সবজি, ৬৭ হেক্টর জুমের ফসল, ৫৭ হেক্টর আদা-হলুদ ও মসলা এবং ৮৮ হেক্টর জমির ফলদ বাগান।
গোয়ালীখোলার কৃষক মোনাসাফ আলী, আবদুল গফুরসহ অনেকে গতকাল রোববার জানান, ভারি বৃষ্টিতে দুই দফায় বন্যায় রোপা, আউশ ধানক্ষেত, আমন বীজতলা ও সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন ক্ষতি গত ২০ বছরেও হয়নি। এ ক্ষতি কৃষকরা আগামী কয়েক বছরেও পুষিয়ে নিতে পারবেন না।
চিম্বুক সড়কের বাসিন্দা ফলচাষি মাংচা থয় ম্রো, থামলাই বম জানিয়েছেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে আমবাগানের শত শত গাছপালা ভেঙে মাটিসহ ধসে পড়েছে নিচের দিকে। পাহাড় ভেঙে মাটিচাপা পড়েছে আনারস বাগান। অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে এ বছর।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ ও থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্ণাচিং মারমা জানান, ধানের চেয়েও এবারের ফলদ বাগানের ক্ষতি হয়েছে অভাবনীয়। হেক্টরের সংখ্যায় কম হলেও বান্দরবানের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস, পেঁপে, কলা, আম, কমলা, মাল্টা, লিচুসহ ফল বাগানগুলো আর্থিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে ফলদ বাগানের গাছপালা মাটিসহ ধসে পড়েছে। ঝড়ো বাতাসে উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বান্দরবানে ৫৪২ হেক্টর ফসলি জমি এবং ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের চেয়েও ফলদ বাগান চাষিরা অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অঙ্কে তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি টাকার কৃষিজমির ফসল ও ফলদ বাগানের ক্ষতি হয়েছে।
সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্থানীয় কৃষক ও বাগান চাষিদের সহায়তার হাত বাড়াতে হবে ব্যাংক-বিমাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিগত কয়েক দশকে বৃষ্টি ও বন্যায় বান্দরবানে কৃষি খাতের এমন ক্ষতি হয়নি বলেও জানান আলতাফ হোসেন।