যে কারণে রিকশাচালকের মামলা থেকে বাদ পড়লেন শাকিব খান
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ইজাজুল মিয়ার দায়ের করা মামলা থেকে চিত্রনায়ক শাকিব খানের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
আজ বুধবার হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সম্পা জাহানের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আদালত আগামী ১০ মে এই মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন। প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে করা হলে মো. শাহ আলম বলেন, ‘সিনেমাতে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁরা শুটিংয়ে পরিচালকের নির্দেশ মেনে চলেন। পরিচালক যে ডায়ালগ দিতে বলেন, নায়ক-নায়িকারা সেই ডায়ালগ দেন। ডায়ালগের ব্যাপারে সাধারণত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিজের কোনো মতামত নেই।’
‘আলোচ্য মামলায় নায়ক শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস দুজনই ভালোবাসা আদান-প্রদান করেছেন পরিচালকের নির্দেশে। মামলায় শাকিব খানকে আসামি করা হলেও অপু বিশ্বাসকে আসামি করা হয়নি।’
এ সময় ওসি বলেন, অপরাধী হলে দুজনই অপরাধী। এ মামলাটির ব্যাপারে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আইনের বিধান মেনে শাকিব খানকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
মো. শাহ আলম আরো বলেন, আলোচিত সিনেমায় বাদী ইজাজুল মিয়ার অনুমতি ছাড়া তাঁর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর নম্বরে অনেক ফোন আসায় মান-সম্মানের হানি হয়েছে। সে জন্য মামলার অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, সেন্সর বোর্ড থেকে যেহেতু সিনেমাটি অনুমতি পেয়েছে, তাই নায়ককে অভিযুক্ত করার সুযোগ নেই। আর সিনেমার সংলাপ নায়ক উচ্চারণ করলেও এর পরিচালক তা নির্ধারিত করে দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার মাস তদন্ত শেষে ৩১ পাতার এই প্রতিবেদন তৈরি করেন। এই সময়ের মাঝে তিনি বাদীর আনা এবং নিরপেক্ষ ছয়জনের ৬১ ধারায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এফডিসিসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য-উপাত্ত এবং মোবাইল অপারেটরের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়।
মামলার প্রধান আসামি নায়ক শাকিব খান ভারতে শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় হবিগঞ্জে আসেননি। তবে তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছে। অপর দুই আসামি ‘রাজনীতি’ সিনেমার পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস ও প্রযোজক আশফাক আহমেদ হবিগঞ্জে এসে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করে গেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ জানান, মামলার আসামির তালিকা থেকে নায়ক শাকিব খানকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রতিবেদনের ওপর তিনি নারাজি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত ২৯ অক্টোবর হবিগঞ্জের আদালতে ৫০ লাখ টাকার মানহানির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন ইজাজুল মিয়া নামে এক অটোরিকশাচালক। এর আগে শাকিব-ভক্তদের মোবাইল ফোনে অতিষ্ঠ হয়ে ইজাজুল গত ২৮ অক্টোবর বানিয়াচং থানায় রাজনীতি সিনেমার নায়ক শাকিব খান, প্রযোজক আশফাক আহমেদ, পরিচালক বুলবুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
নায়ক শাকিব খান ‘রাজনীতি’ ছবিতে নায়িকা অপু বিশ্বাসকে গ্রামীনফোনের একটি মোবাইল নম্বর দেন। সেটি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজলার যাত্রাপাশা গ্রামের ইজাজুল মিয়ার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিলে যায়। এ ঘটনাই ইজাজুল মিয়ার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন শাকিব-ভক্তদের ৭০০ থেকে ৮০০ ফোন কল আসতে থাকে তাঁর মোবাইল ফোনে। অপরিচিত মেয়েদের কাছ থেকে সারাদিন ফোন আসতে থাকে। স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত সন্দেহে স্ত্রী মিশু আক্তার বাবার বাড়িতে চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ১৬ মাস বয়সী একমাত্র শিশু মেয়ে ইমুকে।
অন্যদিকে, একের পর এক কল আসায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক বাদল মিয়া ফোন করে সময়মতো ইজাজুলকে না পেয়ে তাঁকে চালকের চাকরি থেকে বাদ দেন। এসব পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন।