সেই ছাত্রলীগ নেতা আবারও নিয়োগ পেলেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপুর আগের নিয়োগ বাতিল করে আবার অন্য দপ্তরে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। গত ১৩ জুলাই ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে চার ছাত্রলীগ নেতাসহ ছয়জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেন উপাচার্য। অন্যরা যোগ দিলেও শিক্ষকদের একাধিক সংগঠনের বিরোধিতার কারণে কাজে যোগ দিতে পারেননি দীপু।
আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপুকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। আগের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় উপাচার্য নিজ ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানান রেজিস্ট্রার।
এর আগের নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে দায়িত্ব পেলেও নতুন নিয়োগে দীপুকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কোন শাখায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা জানাতে পারেননি রেজিস্ট্রার। এ প্রসঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আজকে শুধু নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, পরে শাখা ঠিক করা হবে।’
এর আগে গত ১৩ জুলাই ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে দেওয়া দীপুর নিয়োগের বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ এবং শিক্ষক সমিতি।
২০১৩ সালে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ আছে দীপুর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাঁর নিয়োগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।
এর পর থেকেই দীপুর যোগদান নিশ্চিত করার দাবিতে উপাচার্যকে চাপ দিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত ৩ আগস্ট এ দাবিতে সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়ে আসে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন বিরোধিতাকারী শিক্ষকরা। ফলে দীপুর কাজে যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার দুপুরে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল হোসেন দীপু। এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আজকে দুপুরে এ নিয়ে উপাচার্যের সাথে দেখা করেছিলাম। নিয়োগের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কিছু শুনিনি।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্যের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এ ছাড়া নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন কি না তা জানতে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল হোসেন দীপুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।
এদিকে আগের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ নিয়োগের প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার সকালে উপাচার্যের সাথে দেখা করব আমরা।’
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায়ই জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে চেয়েছিলাম আমরা। উপাচার্যের ব্যস্ততা থাকায় আগামীকাল সকালে দেখা করব। এর আগেই উপাচার্য বলেছিলেন যে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা সাপেক্ষে ওই ছাত্রলীগ নেতার নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি। এরপরও এ নিয়োগ বাতিল না করলে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অথবা সমিতির জরুরি সাধারণ সভা ডেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব আমরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শামছুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আগেও এর নিন্দা জানিয়েছি, এখনো নিন্দা জানাই। নিয়োগ বাতিলের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান একই স্থানে আছে।’
ফয়সাল হোসেন দীপুর বিরুদ্ধে হল ক্যান্টিন মালিককে মারধর, ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুরসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কারও করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় দীপু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি ওই পদের জন্য অযোগ্য নই। আর ছাত্রলীগ করেও যদি এই আমলে নিয়োগ না পাই এটা দুঃখজনক। আমি শিক্ষক রাজনীতির শিকার।’