পিলপিলের ৩৭ সন্তান!
একটু আগেই জন্ম। নতুন পৃথিবীতে হা করে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছে। মানবশিশু সে নয়। গা খাঁজকাটা। তবুও শিশুর মতোই মমতাকাতর। নাম নাই, পরিচয় আছে। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজননকেন্দ্রের কুমির পিলপিলের সন্তান সে। তার মতো আরো ৩৬টি সন্তানের জন্ম দিয়েছে পিলপিল।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে কুমির প্রজননকেন্দ্রের পুকুরপাড়ে ৬১টি ডিম দিয়েছিল পিলপিল। এগুলোকে ৮৫ দিন ধরে রাখা হয়েছিল কেন্দ্রের বায়ু ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকক্ষে। গতকাল সোমবার বিকেলে ৩৭টি ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এগুলোকে রাখা হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। ২-৩ দিন পর কেন্দ্রের প্যানের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে তাদের।
২১ বছর বয়সে পিলপিল এরই মধ্যে পাঁচবার ডিম দিয়েছে। গত বছর তার দেওয়া ৫৪টি ডিমের মধ্যে ৩৫টি ফুটে বাচ্চা হয়। বাকি ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর নষ্ট হয় ২৪টি ডিম।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট কেন্দ্রে থাকা অপর কুমির জুলিয়েটের দেওয়া ডিম থেকেও ফুটেছিল ৩৬টি বাচ্চা। তবে এ সংখ্যাগুলো আরো বাড়তে পারত। বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রের সহকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, বাচ্চা ফুটানোর যন্ত্র চালাতে জেনারেটরের প্রয়োজন। সে জেনারেটরের তেলের সংকট আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্বল সোলার ব্যবস্থা। এ জন্যই প্রজনন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তৌহিদুরের মতে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হলে ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটানো সম্ভব।
কেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেন বলেন, ‘পিলপিল পুকুর পাড়ে ডিম দেওয়ার পর সেগুলোকে সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরের মধ্যে রাখি। সেখানে প্রায় তিন মাস থাকার পর সোমবার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েছে। তবে ভ্রুণ দুর্বল ও নষ্ট হওয়ায় ২৪টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেনি।’
করমজলের এই কুমির প্রজনন কেন্দ্র গড়ে ওঠে ২০০২ সালে। এর পর ২০০৫ সালে পিলপিল ও জুলিয়েটকে দিয়ে শুরু হয় প্রজনন কার্যক্রম। বর্তমানে কেন্দ্রে ছোট-বড় মিলিয়ে কুমির আছে ২৭৫টি।