খাগড়াছড়িতে বন্যায় ক্ষতি দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল
তৃতীয় দফা বন্যায় খাগড়াছড়িতে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এ ছাড়া তিন উপজেলা ও এক পৌরসভায় এ ব্ন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আট হাজার পরিবার। ভেঙে পড়েছে জেলার প্রায় দেড়শ কিলোমিটার সড়ক।
সমগ্র জেলায় সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। সার্বিক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে ধারণা করছে জেলা প্রশাসন।
তবে খাগড়াছড়ি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর থেকে গত রোববার দুপুর পর্যন্ত তিনটি উপজেলা ও একটি পৌরসভার ক্ষতির একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাতে এ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানা গেছে।
তালিকা অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পৌরসভায় সাত হাজার, সদর উপজেলায় দেড় হাজার, দীঘিনালা উপজেলায় ২০০ এবং মহালছড়িতে ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক টিউবওয়েল ও রিংওয়েল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
দীঘিনালার মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন জানান, তাঁর ইউনিয়নে বন্যায় ৮২৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ৩৫ পরিবারের ভাগ্যে জুটেছে ত্রাণ হিসেবে পরিবারপ্রতি পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি লবণ, আধা কেজি তেল। অন্যদের ভাগ্যে কোনো সাহায্য জুটেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বন্যায় এক হাজার ২৯২ হেক্টর ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৯৮৯ হেক্টর আমন, ১৫৭ হেক্টর আউশ ও ১৪৬ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। পাহাড়ি ঢলে জেলায় ছোট-বড় চার শতাধিক খামারের প্রায় আট কোটি টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত পাঁচ শতাধিক চাষি অসহায় হয়ে পড়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মানিক মিয়া জানান, খাগড়াছড়িতে বন্যায় মাছের যে ক্ষতি হয়েছে এতে জেলায় মাছ সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন জানান, বন্যায় ২৮০টি টিউবওয়েল ও ২২০টি রিংওয়েল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব টিউবওয়েল ও রিংওয়েল জীবাণুমুক্ত করতে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সড়কের প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তফা হাসান জানান, ভারি বর্ষণ ও বন্যায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামত করতে কমপক্ষে সাত কোটি টাকা বাড়তি অর্থ প্রয়োজন হবে।