পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় বিজিবির ২ সদস্য আহত
বান্দরবানের থানছি উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের হামলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুই সদস্য আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে বিজিবির নিয়মিত টহলের সময় উপজেলার রোমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদক এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন বিজিবি নায়েক জাকির এবং জওয়ান আব্দুল গনি। urgentPhoto
স্থানীয়ভাবে বিজিবি ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পরে দুপুরে রাজধানীর পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, বান্দরবানে যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী ঢুকে পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ জন্য মিয়ানমানের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ওই এলাকা সিল করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে।
দুপুর দেড়টায় গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর সেনাবাহিনী ও বিজিবি যৌথ অপারেশন শুরু করেছে। বিজিবির সব বিওপি ক্যাম্প সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
বিজিবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম সাংবাদিকদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, আজ সকালে মদক বিওপি থেকে বিজিবির ১০ সদস্যের একটি টহল দল নৌকা যোগে যাচ্ছিল। অপরদিক থেকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল আসছিল। দুটি টহল দল একত্রিত হয়ে (লিঙ্ক পেট্রল) পুনরায় যার যার ক্যাম্পে ফেরত যাবে।
‘এ সময় পাহাড়ি এলাকায় নদীর দুই পাড় থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা টহল দলের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। তখন নৌকাগুলো পাড়ে ভিড়ে যায়। টহল দলের সদস্যরা পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বিজিবিও গুলি ছুড়ে। এ সময় নায়েক জাকির আহত হন। সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় অনেক ছিল। তারা সেনা ও বিজিবি সদস্যদের পিন-ডাউন করে রেখেছে।’
বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা কাছাকাছি মদক বিওপিতেও গুলি করছে। যাতে সেখান থেকে কোনো সদস্য বের হতে না পারে। কিন্তু বিওপিটা যেহেতু উপরে সে কারণে তারা বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। আমরা আরো সদস্য কাছের বিওপি থেকে সেখানে পাঠানোর চেষ্টা করব। তাদের ঘেরাও করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন তারা তাদের সীমান্ত ব্লক করে দেয়।
থানছির রেমাক্রী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা জানান, সকাল ৯টার দিকে বড় মদক এলাকার এক ইউপি সদস্য তাঁকে জানান, বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলি শুরু হয়েছে। এলাকার লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গোলাগুলির পর থেকে বড় মদক বাজারে দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
চসিংগাফা মৌজার মৌজা প্রধান হেডম্যান মুই শৈ থুই মারমা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনার পর লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় যোগাযোগের কোনো মাধ্যম না থাকায় সর্বশেষ পরিস্থিতি কী সে বিষয়ে কোনো কিছু জানা যায়নি।
মঙ্গলবার বিজিবি সদস্যরা সীমান্তবর্তী আন্দারমানিক এলাকা থেকে ১৩টি ঘোড়া আটক করে। আটককৃত ঘোড়াগুলো বড় মদক বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আজ সকালে এ হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করছে বিজিবি।
স্থলপথে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম না থাকায় হেলিকপ্টারে করে অতিরিক্ত বিজিবি ও সেনা সদস্য পাঠানো হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির প্রতিটি বিওপি সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী দল রয়েছে। তাদের মধ্যে আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি), আরাকান ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপিএ) অন্যতম।
দীর্ঘদিন ধরে এ সংগঠনগুলো মাদক চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছে। স্থানীয়রা জানায়, কয়েকদিন ধরে আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বড় মদক এলাকার কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করছে।