১৫ বছরের মধ্যে তলিয়ে যাবে সুন্দরবন!
সুন্দরবন অঞ্চলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৈশ্বিক মাত্রার তুলনায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলটি পানির নিচে চলে যাবে। এর ফলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটবে। কেননা অন্য কোনো দ্বীপ অঞ্চলের চেয়ে সুন্দরবন অঞ্চলে অনেক বেশি মানুষ বাস করে।
বাংলাদেশ ও ভারতের অন্তত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ বঙ্গোপসাগরের পাড়ের এই অঞ্চলে বাস করে। এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ ছোট দ্বীপ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য দুর্লভ বন্য প্রাণীর আবাসস্থল এই ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ইউনেসকো এই বনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ও ভারত মিলে প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই বনের অবস্থান। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশকে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষা করে এই বন।
বিশ্বব্যাংক সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে। সংস্থাটির পরিবেশ বিশেষজ্ঞ তাপস পাল ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসকে জানিয়েছেন, জলবায়ুর বড় পরিবর্তনের কারণে শিগগিরই এখানে বড় ধরনের বাস্তুচ্যুতি ঘটতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি দ্বীপ পানিতে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে এবং আরো অনেকগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন তহবিলের প্রধান অনুরাগ দঙ্গা আশঙ্কা করছেন, গণ-বাস্তুচ্যুতি কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। একটি সংকট এখন সৃষ্টির অপেক্ষায় আছে।
অনুরাগ মনে করেন, ‘ব্যাপক হারে মানুষের স্থানচ্যুতি এবং অসংখ্য মানুষের সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে সামান্য দূরে আছি আমরা। অবশ্য এরই মধ্যে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।’
প্রতি বছর সুন্দরবনের বাসিন্দারা নোনাপানি থেকে তাঁদের ফসল বাঁচাতে মাটি-কাদা দিয়ে বাঁধ তৈরি করেন। কিন্তু প্রতিবারই নদী ও বৃষ্টি তাঁদের সব প্রচেষ্টা ধুয়ে নিয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে বিজনেস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক আগে স্থানীয় বকুল মণ্ডলের পাঁচ একর জায়গা ছিল। যেখানে তিনি ধান চাষ করতেন এবং পুকুরে মাছের চাষ করতেন। কিন্তু ভাঙনে এখন কোনো রকমে সমুদ্রের ধারে টিকে আছে তাঁর ছোট্ট কুটিরটি। সমুদ্রের ধারে এটি তাঁর পঞ্চম মাটির ঘর। এর আগে চারটি ঘরই সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।
জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর সুন্দরবনের উপকূলের ২০০ মিটার জমি সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। গত কয়েক দশকে ভারতের সুন্দরবন উপকূলের ২১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রে হারিয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন উপকূলের ঘরহারা মানুষদের পুনর্বাসনে সরকারি কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই ওই সব মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশেও সামান্য কিছু বাঁধ নির্মাণ ছাড়া তেমন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
একে তো সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে, তার ওপর অধিক জনসংখ্যার চাপ। তাই বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য মানুষকে ধীরে ধীরে সুন্দরবন ছেড়ে চলে যেতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। যাতে করে এই অঞ্চল নিজে থেকেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষত ভরাট করে আবার যৌবন লাভ করতে পারে।