শহরে বৃষ্টি জল কাদামাখা নোংরা দেদার
সকালে ঢাকাবাসী ঘুম ভেঙেই দেখেছেন আকাশের গোমড়া মুখ। আজ মঙ্গলবার ছুটির দিন না হওয়ায়, মেঘের ধমককে অগ্রাহ্য করে আড়মোড়া ভেঙে নিজ নিজ কাজের উদ্দেশে বেরোতে হয়েছে প্রতিদিনের খেটে খাওয়া মানুষদের। আর রাস্তায় নেমেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
সামান্য বৃষ্টিতে শহরের নিচু এলাকা আর পথের খানাখন্দ ভরে ওঠে জলে। আর ভরা বর্ষণে তো কথাই নেই। প্রবল বারিপাতে শহরটি যেন প্লাবিত হয়েছে : বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে জলের নিচে।
কর্মস্থলগামী মানুষ, স্কুলের পড়ুয়া, হাসপাতালের রোগী, পথচারী, বাস, অ্যাম্বুলেন্স, দমকলের গাড়ি, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল — কেউই, কিছুই রেহাই পায়নি। সবাইকে হতে হয়েছে কাকভেজা। জলের তোড়ে যেন অবরোধ করে বসেছিল পথ আর ফুটপাথকে।
যাঁরা কার, বাস, অটোরিকশা বা লেগুনায় ছিলেন, তাঁদের দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হয়েছে নিজ নিজ বাহনেই। পথে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার কোনো উপায়ও ঠিক ছিল না। যানজট আর তলিয়ে যাওয়া পথ-ফুটপাথের কারণে চাইলেও সহজে হেঁটে গন্তব্যে যেতে পারেননি তারা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সানজিদা আলম। প্রতিদিন গাজীপুর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসা-যাওয়া করেন তিনি। এনটিভি অনলাইনকে সানজিদা জানান, অন্যদিন সকাল ৬টায় রওনা দিলে সাড়ে ৭টা নাগাদ কর্মস্থলে পৌঁছে যান তিনি। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর এ কারণে সৃষ্ট যানজটের কবলে পড়ে আজ কারওয়ান বাজার আসতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় সোয়া চার ঘণ্টা।
এদিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় পুরো এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। কাঁচাবাজারের সবজি ভাসছে পানিতে। ব্যবসায়ীরাও প্রায় হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে বেচাকেনার কাজ সারছেন।
কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের আড়তের পাশেই রয়েছে বিরাট ডাস্টবিন। দেখা গেছে পানিতে তলিয়ে গেছে ডাস্টবিন; আর সেখানকার ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের সব এলাকায়। সেই ময়লা পানিতেই একাকার হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শাকসবজি।
শুধু কারওয়ান বাজারই নয়, ঢাকার বেশির ভাগ সড়কেরই আজ এই অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিন পানিতে ডুবে গেছে আর এর সব ময়লা পানিতে ভেসে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। এই ময়লা পানিতে চলাফেরা করায় নগরবাসীর বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলছে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য রাস্তা খোঁড়ার কাজ। চলছে ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। এসব কারণেও রাস্তার বিভিন্ন অংশ খোঁড়ার কাজ চলছে। বৃষ্টির কারণে এসব এলাকা কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া এসব গর্তে পড়ে বহু ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে আজ।
রাজধানীর মিরপুরের কালশী থেকে এগারো নম্বর সেক্টর হয়ে খামারবাড়ী পর্যন্ত পুরো সড়ক/পথ ছিল পানির নিচে। পানির কারণে ধীরগতিতে চলতে হয়েছে যানবাহনগুলোকে। ফলে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। এ ছাড়া ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বেশকিছু যানবাহন রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ার কারণেও বেড়েছে যানজট। বিজয় সরণি পেরিয়ে কারওয়ান বাজারের কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের মূল সড়কেও জমে ছিল পানি। এমনকি কোথাও কোথাও ফুটপাথও তলিয়ে গেছে পানির নিচে।
বৃষ্টির কারণে উত্তরা, খিলক্ষেত, বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী এই পুরো পথে যানজটের কবলে পড়েছেন পথচারী ও যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে তাদেরও।
একই অবস্থা খিলগাঁও, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, সাতরাস্তা এলাকায়। বেইলি রোড, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, পান্থপথ, গ্রীন রোডসহ এলাকার সড়কগুলো যথারীতি ছিল পানির নিচে। ফলে এসব এলাকার অলিগলিগুলোও ছিল রিকশাসহ অন্য যানবাহনে পূর্ণ। এফডিসির সামনে থেকে সোনারগাঁও হোটেলের মোড় পর্যন্ত সৃষ্টি হওয়া প্রবল যানজট ও জলাবদ্ধতায় দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হয়ে নগরবাসীকে। এ সময় সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে ছিল কোমরসমান পানি।
ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর সড়ক ও লালমাটিয়ার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো হালকা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিশেষত সিএনজি অটোরিকশার মতো যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বাহন বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বাভাস কর্মকর্তা (ডিউটি ফোরকাস্টিং অফিসার) এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।