রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করছেন কামারুজ্জামান
রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আজ শনিবার সকালে তাঁর আইনজীবীরা এ কথা জানান।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচজন আইনজীবী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান, তাঁরা রায় পুনর্বিবেচনা করার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি চেয়েছিলেন। কামারুজ্জামান অনুমতি দিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামানের মনোবল শক্ত রয়েছে। তিনি এখনো তাঁর অবস্থানে অনড় আছেন। একাত্তরের ঘটনার জন্য তিনি কোনোভাবেই অনুতপ্ত নন। কেননা তিনি দাবি করেন যে এসব ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
এই আইনজীবী জানান, কামারুজ্জামান তাঁদের কাছে বলেছেন, রায় নিয়ে তাঁর কোনো দুঃখ নেই। দুঃখ একটাই, তা হলো মিথ্যা অভিযোগে বিশ্ববাসীর কাছে তাঁকে ছোট করা হয়েছে। কারণ একাত্তর সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ওই বয়সী একজন মানুষের পক্ষে এসব অপরাধ করা সম্ভব নয়। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন কি না তা জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম জানান, রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পরে এ নিয়ে চিন্তা করা যাবে বলে জানিয়েছেন কামারুজ্জামান।
আইন অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে হয়, সে অনুযায়ীই তাঁরা আবেদন করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই ১৫ দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। তাই তাঁরা শিগগিরই পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন। ১৫ দিনের এক ঘণ্টা আগেও এই রায় কার্যকরের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তাজুল ইসলাম।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন কামারুজ্জামানের পাঁচ আইনজীবী তাজুল ইসলাম, মশিউল আলম, মতিউর রহমান আকন্দ, মো. শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দীক। সেখান থেকে বেরিয়ে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই দিন দুপুরে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক। আগের দিন বুধবার কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দেন। বুধবার রাতেই পূর্ণাঙ্গ রায়টি আপিল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। এরপর বৃহস্পতিবার মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করা হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।