দুই নারীর সঙ্গে বর্বরতার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই নারীসহ তিনজনকে বেঁধে প্রকাশ্যে পিটিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় কেড়াগাছি ইউনিয়নের চৌকিদার ইব্রাহীম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় এর আগে পুলিশ রুহুল কুদ্দুস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
ফেসবুকে প্রকাশিত ছবি দেখে গত শনিবার রাতে ইব্রাহীমকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন। আজ রোববার তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এসআই জানান, চৌকিদার ইব্রাহীম দুই নারীসহ তিনজনকে রুহুল কুদ্দুসের হুকুমে বেঁধে নিয়ে আসেন।
এদিকে কেড়াগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ প্রায়ই রাতে আসামিদের ধরতে আসছে। এতে গ্রাম এখন অনেকটাই পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের ঘটনার সময় কুদ্দুস, বিল্লাল, মোস্তফা, জিয়া, জোহর, লাল্টু, ভোলা, আসাদুল, কাওসারসহ অন্যান্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।’ তিনি আরো জানান, গ্রামের অন্য যেসব নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে থেকে উল্লাস করেছেন তাঁদের ছবিও ফেসবুকে দেখা গেছে। পুলিশ অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাঁদের আটক করবে এই আশঙ্কায় তাঁরাও গা-ঢাকা দিয়েছেন।
অপর দিকে ‘উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী’ এই প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা ওই মামলার (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলা) আসামি রুহুল কুদ্দুসও এখন পলাতক। ফেসবুকের বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, রুহুল কুদ্দুস পাঁচপোতার সুলতানা (ছদ্মনাম) ও তাঁর খালাতো বোন পারভীনসহ (ছদ্মনাম) আরিফকে (ছদ্মনাম) কুড়াল দিয়ে পেটান। ২৯ অগাস্টের নির্যাতনের ঘটনায় কুদ্দুস নেতৃত্ব দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, কুদ্দুস বলছে, ‘ধর ধর শুয়ারের বাচ্চা, মজা দেখাচ্ছি।’ কুদ্দুস নিজেই সুলতানা ও পারভীনের নিতম্বে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। কান ধরে ওঠবস করার নির্দেশও দেন কুদ্দুস।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই কুদ্দুসই সুলতানাদের ঘরে ঢুকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে শুরু করেন নির্যাতন।
সাতক্ষীরার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার সাঈদ জানান, খুব শিগগিরই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তদন্তে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে এবং ছবিতে যাদের নির্যাতন করতে দেখা গেছে তারা সবাই এর আওতায় পড়বে বলে জানান তিনি।
গত ২৯ অগাস্ট কলারোয়ার কেড়াগাছি ইউনিয়নের পাঁচপোতা গ্রামের মালয়েশীয় প্রবাসীর স্ত্রী সুলতানা ও তাঁর খালাতো বোন পারভীন এবং এক যুবককে বিল্লাল, কুদ্দুস ও মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সমাজপতি দাবি করে রশিতে বেঁধে বাঁশ ও কুড়াল দিয়ে পেটায় এবং কানধরে ওঠবস করিয়ে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর এনটিভি অনলাইনে ‘ঘর থেকে ধরে নিয়ে দুই নারীর সঙ্গে বর্বরতা’ শিরোনামে একাধিক ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।