সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ডা. সিরাজুল ইসলামের প্রাণ
সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও আবাসন ব্যবসায়ী বিশিষ্ট চিকিৎসক সিরাজুল ইসলামের (৬২) প্রাণ। ঢাকার মালিবাগে অবস্থিত ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ তিনজন আজ রোববার নরসিংদীতে প্রাণ হারিয়েছেন।
সকালে নরসিংদী সদর উপজেলার রাইনাদী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের বহনকারী পাজেরোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ডা. সিরাজুল ইসলাম ছাড়াও নিহত হয়েছেন তাঁর মেয়ের শ্বশুর আবদুল খালেক (৬০) ও চালক অন্তু (৩০)।
পুলিশ জানায়, ডা. সিরাজুল ইসলাম সকালে তাঁর মেয়ের শ্বশুরকে নিয়ে হাসপাতালের জায়গা দেখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাচ্ছিলেন। তাঁদের পাজেরো গাড়িটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর রাইনাদী নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাজেরোটি দুমড়ে-মুচড়ে মহাসড়কের পাশে গিয়ে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন পাজেরোর তিন যাত্রী। পরে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. সিরাজুল ইসলামসহ একে একে তিনজনই মারা যান।
মাধবদী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়।
এদিকে ডা. সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওয়েবসাইটে শোক প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘আজ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পথে ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের সবার প্রিয় চেয়ারম্যান স্যার ডা. সিরাজুল ইসলামসহ আরো দুইজন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আপনারা সবাই তাঁদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।’
ডা. সিরাজুল ইসলাম সম্পর্কে তাঁর মেডিক্যাল কলেজের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি ১৯৫৩ সালের ১ মার্চ নোয়াখালীর চাটখিলের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ডা. সুলতান আহমেদ। পরে তাঁরা ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসবাস শুরু করেন। তিনি ঢাকার কে এল জুবিলি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে তিনি জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান-নিপসমে প্রশাসক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন হন। ১৯৯১ সালে তিনি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। এরপর তিনি জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনিস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পান। চাকরি শেষে তিনি চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও আবাসন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়াও তিনি সুমনা হাসপাতাল, সুমনা ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি, সুমনা মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (এসএমএটিএস), সুমনা প্রাইভেট লিমিটেড ও সুমনা বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠা করেন। চিকিৎসাসেবা ও ব্যবসার পাশাপাশি ডা. সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকার ফরাসগঞ্জ ক্লাবের আজীবন সদস্য।