খাগড়াছড়িতে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো তিনজন।
আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার স্বনির্ভর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল আউয়াল এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা সবাই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ- প্রসিত খিসা) সদস্য বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও জেলা সমন্বয়কারী মাইকেল চাকমা। তিনি এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এম এন লারমা) গ্রুপকে দায়ী করেছেন।
যদিও এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন জেএসএস-এম এন লারমার নেতারা।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। এঁরা হলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এলটন চাকমা ও মহালছড়ি উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জিতায়ন চাকমা।
আহতরা হলেন সমর বিকাশ চাকমা (৪৮), সুকিরণ চাকমা (৩৫) ও সোহেল চাকমা (২২)। এই তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটু সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হঠাৎ আমরা খবর পাই যে, একটা গ্রুপ স্বনির্ভর বাজার এলাকায় এসে পুলিশ বক্সের দিকে অতর্কিতে গুলি করছে। পুলিশ বক্সের দেয়ালে পাঁচটি গুলির আঘাত লেগেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে।’
লাশগুলো উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নয়নময় ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নয়জনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়জন মৃত। বাকি তিনজনকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজন আশঙ্কামুক্ত।’
স্থানীয়রা জানিয়েছে, এ ঘটনার পর থেকে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। লোকজন ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না।
এর আগে এ বছরের ৩ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে (৫২) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলা পরিষদের পাশের বাসা থেকে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
শক্তিমান চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে তার অন্যতম উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নেতা ছিলেন। সর্বশেষ তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর দল এই ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করেছিল। যদিও দলটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
এর পরদিন ৪ মে শক্তিমান চাকমার অন্তোষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) থেকে বেরিয়ে গঠন করা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের আহ্বায়ক তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা, সজীব চাকমা, সেতুলাল চাকমাসহ পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্ত:কোন্দলের জের ধরে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে পার্বত্য তিন জেলায়।
এর মধ্যেই গত ১৩ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। চঞ্চুমনি চাকমা ইউপিডিএফ নেতা।