খাগড়াছড়ি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কমিটি, লাশ হস্তান্তর
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ব্রাশফায়ারে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম এ কমিটি করে দেন। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) আবু ইউসুফকে আহ্বায়ক এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মো. শামছুল তাবরীজকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—খাগড়াছড়ির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নয়নময় ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন মজুমদার।
গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার স্বনির্ভর বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় ছয়জন নিহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরো তিনজন।
নিহতরা সবাই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-প্রসিত খিসা) সদস্য বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও জেলা সমন্বয়কারী মাইকেল চাকমা। তিনি এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এম এন লারমা) গ্রুপকে দায়ী করেছেন।
যদিও এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন জেএসএস-এম এন লারমার নেতারা।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন সমর বিকাশ চাকমা (৪৮), সুকিরণ চাকমা (৩৫) ও সোহেল চাকমা (২২)। এ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়ছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকায় স্থানীয় গ্রামবাসী দুপুরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেখানেও হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত শন কুমার চাকমা (৫৫) বিকেল ৩টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
চারজনের লাশ হস্তান্তর
হামলায় নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনের পরিবারের কেউ না আসায় তাঁদের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর থানায় রাখা হয়েছে।
গতকাল দুপুরের পর থেকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শুরু হয়। সন্ধ্যা নাগাদ মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পেরাছড়া এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে মারা যাওয়া শন কুমার চাকমা ও ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পথচারী ধীরাজ চাকমার মরদেহ পানছড়িতে এবং মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রূপম চাকমার মরদেহ স্বনির্ভর বাজারের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জিতায়ন চাকমার মরদেহ তাঁর স্ত্রী প্রভাতী চাকমা এবং রূপম চাকমার মরদেহ তাঁর চাচা নয়ন চাকমা বুঝে নেন। অন্যদিকে, ধীরাজ চাকমার মরদেহ প্রতিবেশী আপ্রুইং মারমা এবং শন কুমার চাকমার মরদেহ তাঁর বড় বোন কল্পলতা চাকমা পুলিশের কাছ থেকে বুঝে নেন। চারটি মরদেহ আজ রোববার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থানীয় শ্মশানে দাহ করার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের তিন নেতা তপন চাকমা, পলাশ চাকমা ও এলটন চাকমার পরিবারের কেউ না আসায় তাঁদের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর থানায় রাখা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো জানান, পুলিশি নিরাপত্তায় চারজনের মরদেহ নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে তপন, পলাশ ও এলটনের পরিবারের কেউ এখনো না আসায় তাঁদের মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে। পরে সেখান থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।