‘পাড়া মাইরা গুলি করছে’
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহের বাড়িতে ককটেল হামলার অভিযোগে আটক নূরুজ্জামান দাবি করেছেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে রাস্তা থেকে আটক করে অফিসে নিয়ে মারধর করে এবং পরে চোখ বেঁধে পায়ে গুলি করে। ককটেল হামলার ঘটনায় তিনি জড়িত নন।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে ময়মনসিংহ শহরে রওশন এরশাদের বাড়ি ‘সুন্দর মহল’ লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল ছোড়ে। এর একটি বিস্ফোরিত হয়নি। এ ছাড়া চটের বস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে বাসার ভেতরে নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর বাসায় ছিলেন না।
রওশন এরশাদের বাসভবনে দায়িত্বরত পুলিশের নায়েক বজলুর রহমান দাবি করেন, হামলার পর তাঁর কাছে থাকা শটগানের গুলিতে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুজ্জামান আহত হন।
আহত নূরুজ্জামানের বাড়ি সদর উপজেলার আকুয়া চুকাইতলা গ্রামে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে আজ রোববার সকালে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মোশাররফ সাবের (চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন) বাসার সামনে দিয়া আসতেছি। এর একটু আগে মনে হয় ওই সুন্দরী মহলে আগুন দেওয়া হইছে। এর মধ্যে আমি যাইতাছি। আমি তো আর জানি না। তার মধ্যেই ডিবি পুলিশ আমারে ধইরাই কয় এই যে বিএনপির লোক। ধইরাই কয় এ স্বেচ্ছাসেবক দল করে, মিটিং মিছিলে দেখি, এরে ধরে লইয়া লও। ধইরা লইয়া গ্যাছে গা। পরে ডিবি অফিসে নিয়া আমারে কিছু মারধর করছে। কয়, আগুন লাগাইছোস ক্যা? তোর স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নাম কী? কোন ইউনিয়নে সভাপতি কে?... তোরে ছাইড়া দিমু। পরে আমাকে নিয়ে...। আমার চোখ বাইন্ধা ফেলছে, চোখ বাইন্ধা আমারে চার পাঁচজন পাড়া মাইরা ধরছে। একজন বন্দুক ঠেকাইয়া গুলি করছে।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত রাত (শনিবার) সোয়া ১২টায় দুর্বৃত্তরা বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সুন্দর মহল বাড়িতে পেট্রলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে পালানোর সময় পুলিশ ধাওয়া দেয়। হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত একটি ককটেল ও পেট্রল মেশানো চটের বস্তা উদ্ধার এবং নূরুজ্জামানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।’
ছাত্রদল ও যুবদলের ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা : এদিকে রওশন এরশাদের বাসায় হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ নূরুজ্জামান, জেলা ছাত্রদল, যুবদলের সভাপতিসহ ১১ জনের নামে মামলা করেছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবু মোহাম্মদ ফজলুল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ধারায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম আজাদ, আটক নূরুজ্জামান, ফরহাদ হোসেন, খাগডহর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আজাহার, সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন ও দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিল্লালের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো চারজনের নামে আজ সকালে থানায় একটি মামলা করেছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার রাতে গফরগাঁও থানা শ্রমিক দলের সভাপতি গফুর হাসানকে তাঁর স্টেশন রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়িয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয় থানা যুবদলের সদস্য বাদল সরকারকে।
গফরগাঁও থানার ওসি আবু উবায়দা ও ত্রিশাল থানার ওসি মো মনিরুজ্জামান দুজনকে আটকের কথা জানিয়েছেন।