জুমে মেতেছে পাহাড়
জুম উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়িরা। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষিভিত্তিক এ উৎসবে অংশ নিতে জুমিয়ারা দূর-দূরান্ত থেকে আজ শনিবার জেলা সদরের সূয়ালক ইউনিয়নের ম্রোলংপাড়ায় জড়ো হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নর-নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচে-গানে মাতিয়ে তোলে পাহাড়ি জনপদ। এ সময় ম্রো বাঁশির দিগন্তবিস্তারি সুর আবেশ ছড়িয়ে দেয় পাহাড়ে পাহাড়ে।
ম্রো সম্প্রদায়ের নবান্ন (চামুংপক) উৎসবই মূলত জুম উৎসব নামে পরিচিত। এ সময়ই ম্রোরা বিভিন্ন পাহাড় থেকে জুমচাষের ফসল তোলা শুরু করে। বিকেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং। পরে বের হয় শোভাযাত্রা।
ঐতিহ্যবাহী রীতি আর সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পাহাড়ে জুমচাষ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। জুমের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক ফসল চাষ করা যায়। এ চাষ পদ্ধতি খুবই কষ্টকর। জুমচাষের মাধ্যমে পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারগুলো সারা বছর জীবিকা নির্বাহ করে। আর জুমের ধান কাটাকে ঘিরেই হয় জুম উৎসব। পাহাড়ের পর পাহাড় পাড়ি দিয়ে এ সময় সকল সম্প্রদায়ের জুমিয়ারা মিলিত হয় একসঙ্গে, গড়ে তোলে সেতুবন্ধ। চলে নাচ, গান আর সুরের প্রতিযোগিতা।
জুম উৎসবের উদ্বোধনে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যউচিং চাক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মংনু চিং, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিইয়ং ম্রো, ম্রাচা খেয়াং, থোয়াইহ্লা অং, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর, বম সম্প্রদায়ের নেতা জুমলিয়ান আমলাই, সূয়ালক ইউপির চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো, ম্রো জুমচাষি মেনুলু ম্রো প্রমুখ।
বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিবছর শত শত পাহাড়ে জুমচাষ করে জুমিয়ারা। এ বছর জেলায় প্রায় আট হাজার ৪৫৮ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুমচাষ করা হয়েছে। এক পাহাড়ে একাধিকবার জুমচাষ করা যায় না বলে প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ে জুমচাষ করে জুমিয়া পরিরবারগুলো।
মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশরাই জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ম্রো গবেষক সিইয়ং ম্রো এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুমচাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেওয়া হয়। মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুমচাষ আরম্ভ করে জুমিয়ারা। চার-পাঁচ মাস পরিচর্যার পর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের দিকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু হয়।
জুমচাষে ধান, ভুট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারমা, টকপাতাসহ বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করে পাহাড়িরা। ধান কাটা মৌসুমে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নবান্ন (জুম) উৎসবে মেতে ওঠে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।