মেয়ের প্রাণরক্ষায় বিষাক্ত তরল খেলেন মা!
ছয় বছর বয়সী মেয়ের গলায় ছুরি ধরে রাখে দুই দুর্বৃত্ত। আর মা শরিফা খাতুনের (২৫) হাতে বিষাক্ত তরল পদার্থের শিশি দিয়ে বলা হয়, পান করতে। হুমকি দেওয়া হয়, পান না করলে মেরে ফেলা হবে মেয়েকে। প্রাণ প্রিয় মেয়েকে বাঁচাতে শরিফা পান করেন বিষাক্ত তরল। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরিফার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে বিষাক্ত তরল পদার্থ পান করার ওই কারণ জানিয়েছেন স্বামী ইউনুছ আলী ও প্রতিবেশীকে।
হোটেল ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে একই ইউনিয়নের দীঘিপাড়ার আনিছুর রহমান ও খবির উদ্দিন তাঁর স্ত্রীকে বিষাক্ত তরল পান করতে বাধ্য করেন।
একই তথ্য জানিয়েছেন ইউনুছ আলীদের প্রতিবেশী মনিরুজ্জামান ও নাসির।
ইউনুছ আলী জানান, আনিছুর রহমান ও খবির উদ্দিন রোববার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে তাঁদের ঘরে ঢোকেন। এরপর তাঁরা তাঁদের একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের (৬) গলায় ছুরি ধরে শরিফার হাতে একটি বিষের শিশি দেন। তাঁরা ওই শিশি থেকে শরিফাকে বিষ পান করতে বলেন। অন্যথায় সুমাইয়াকে হত্যা করা হবে বলে তাঁরা হুমকি দেন। তখন সন্তানের জীবনের কথা ভেবে তাঁর স্ত্রী ওই শিশি থেকে তরল পদার্থ পান করেন।
রোববার রাতে ইউনুছ আলী হোটেল বন্ধ করে বাড়িতে ফিরে দেখেন, বাড়িতে অনেক মানুষের ভিড়। আর শরিফা বমি করছিলেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে শরিফা তাঁকে বলেন, দীঘিপাড়ার আনিছুর রহমান ও খবির উদ্দিন রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে তাঁদের ঘরে ঢুকে শিশুকে জিম্মি করে বিষপানে বাধ্য করেন। এরপরই ইউনুছ আলী শরিফাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল হক বলেন, ‘গতকাল রাত ১১টার দিকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত শরিফাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এরপর ওয়াশ করে রাত পৌনে ১২টার সময় তাঁকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাসুদ বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোররাত ৩টার দিকে শরিফা মারা যান।’
চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ‘দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে শরিফার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার রাতে দাফন শেষে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।’