প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন : বিএনপি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (রোববার) উত্তরপাড়ার ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন।
আজ সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ‘সংবিধানই শেষ কথা নয়, জনগণের জন্যই সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো সংবিধানই অপরিবর্তনযোগ্য নয়, জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন বর্তমান সময়ের দাবি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে ‘প্রহসনের নির্বাচনের’ মাধ্যমে দখল করা ‘অবৈধ ক্ষমতা’ হারানোর শঙ্কা ও আসন্ন নির্মম পরিণতির ভাবনাই প্রকাশিত হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি (শেখ হাসিনা) ১৯৮২ সালে সামরিক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেন। তিনিই ২০০৭ সালের মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের ১/১১-এর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, তাদের লগি-বৈঠার নরহত্যার আন্দোলনের ফসল ছিল সেই সরকার এবং তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরোপুরি বৈধতা দেন’ তিনি বলেন, ‘সেই মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং তাদের পুরস্কৃত করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন।’
সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক নয়
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। অগণতান্ত্রিক কোনো পন্থাকে বিএনপি কখনো স্বীকৃতি দেয়নি; বরং আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক এবং নৈরাজ্যকর মানসিকতা ও কর্মকাণ্ডের কারণেই অগণতান্ত্রিক শক্তির উদয় হয়েছে প্রতিবার। দেশ ও জাতির গর্ব সেনাবাহিনী তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী জাতীয় সেনাবাহিনীকে আমরা কখনোই বিতর্কে জড়াতে চাই না।’
‘সংবিধানই শেষ কথা নয়’
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে গণশক্তির ক্ষমতার ধারণা এ দেশের জনগণ ১৯৬৯, ১৯৭১ ও ১৯৯০-এ প্রমাণ করেছে। রাষ্ট্রীয় শ্বেতসন্ত্রাস ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আজ গণশক্তির বহুমাত্রিক উত্থান হয়েছে। সেই গণশক্তির প্রচণ্ড সুনামিতে আওয়ামী লীগের অবৈধ ক্ষমতার মসনদ অচিরেই ভেসে যাবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিয়ে আমরা সংবিধান সংশোধন করেছিলাম। সেই দাবিতে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখলের সুবিধার্থে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে। সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ অপরিবর্তনযোগ্য করে ভবিষ্যৎ সংসদের ক্ষমতা হরণ করা হয়েছে, যা সরাসরি বেআইনি। তাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থাকাও বেআইনি। কোনো সংবিধানই অপরিবর্তনযোগ্য নয়, জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন বর্তমান সময়ের দাবি।’
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সব দরজা বন্ধ করে শুধু বন্দুকের নল ব্যবহার করে ‘অবৈধ সরকার’ প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তি ও উগ্রবাদকে উৎসাহিত করছে। এর পরিণামে গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে।
ক্রসফায়ার
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল পুলিশ মিরপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতিকে থানায় ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ক্রসফায়ারের গল্প সাজিয়েছে। আরো তিনজনকে একইভাবে গুলি করে হত্যার পর গণপিটুনির কাহিনি সাজিয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। আমরা এ ধরনের নরহত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের হিসাব রাখা হচ্ছে। সময়ের পরিবর্তন হলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
‘সরকারি পরিকল্পনায় নাশকতা’
সালাহ উদ্দিন বলেন, গতকাল কেরানীগঞ্জে র্যাবের হাতে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন পেট্রলবোমাসহ ধরা পড়ে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য নেই। এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেট্রলবোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ও ককটেলসহ হাতেনাতে ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। কিন্তু তাদের ওপরের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারি পরিকল্পনায় পরিচালিত নাশকতার ষড়যন্ত্র এখন জনগণের সামনে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী র্যাব-পুলিশ-বিজিবিকে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে গণহত্যার হুকুম দিয়ে তার দায়ভার নিজের কাঁধে নিলেও কেউই গণহত্যার বিচার থেকে রেহাই পাবে না।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আজ প্রত্যেক ঘরে ঘরে গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলন গড়ে উঠেছে। অবরুদ্ধ ও বিলুপ্তপ্রায় গণতন্ত্রের মুক্তির সংগ্রাম ভোটাধিকার, মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণের ন্যায্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’