দক্ষিণ আফ্রিকায় পুড়ে অঙ্গার চার বাংলাদেশি
দক্ষিণ আফ্রিকায় আগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ফেনীর তিন মামা-ভাগ্নেসহ চার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার ভোর রাতে দেশটির গুটেং প্রদেশের ব্রিক্সটনে এ ঘটনা ঘটে। পরে গতকাল শনিবার রাত ৯টায় তাঁদের পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের আপন দুই ভাই আনোয়ার হোসেন (২৮) ও মোশারফ হোসেন (২২) এবং তাঁদের মামা দাগনভুঞা উপজেলার জগতপুর গ্রামের মমিনুল হক। অপর নিহতের নাম জানা যায়নি। তবে তিনি জামালপুর জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
নিহত আনোয়ারের বড় ভাই দেলওয়ার হোসেন জানান, তাঁর তিন ভাই আনোয়ার হোসেন, মোশাররফ হোসেন ও সায়েদ হোসেন ব্রিক্সটন শহরে থাকতেন। ১০ বছর আগে আনোয়ার সেখানে মুদির দোকান দেন। পরে তাঁর ভাই মোশাররফকেও সেখানে নিয়ে যান। একই দোকানে কাজ করতেন তাঁদের মামা মমিনুল হক ও জামালপুরের আরেকজন।
কাজ শেষে তাঁরা দোকানের ওপর তলার বাসায় থাকতেন। প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবারও তাঁরা ওই ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ৩টার দিকে নিচতলার দোকানে আগুন লাগে। ছড়িয়ে পড়ে ওপরেও। গতকাল শনিবারও সারাদিন আগুন জ্বলে সেখানে। পরে রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল উদ্ধার করে। ওই দোকানে না থাকায় রক্ষা পান আরেক ভাই সায়েদ হোসেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ছেলেকে হারিয়ে ফেনীতে বড় ছেলেকে ধরে নিহত আনোয়ারের মায়ের আহাজারি। ছবি : এনটিভি
এদিকে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে ব্রিক্সটনে থাকা আনোয়ারের আরেক আত্মীয় মাসুদ মুঠোফোনে আনোয়ারের বাবাকে এ খবর জানান। একই সংবাদ আসে মমিনুল হকের পরিবারেও।
এ সংবাদে দুই পরিবারেই এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে, এর মধ্যেও তাদের একটাই চাওয়া, বাংলাদেশ সরকার যাতে তাঁদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে। দেশের মাটিতেই যেন তাঁদের দাফন করা হয়।
নিহত আনোয়ারের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা কালকে ৯টার সময় খবর পাইছি। আমার ভাগিনা একটা বলতেছে কি আমাদের দোকানে আগুন লাগছে। এবার শুনি কি, আগুন জ্বলতেছে, ফায়ার সার্ভিস, টায়ার সার্ভিস নিভাইতে পারতেছে না। এই হুনা হুইনতেছি। তারপর আবার হুনি যে, তাঁরা দোকানের ওপর রাত্রে থাকত। এহন হুনি যে এগুন মরি গেছে। এ কথাই হুনছি। আমরা সরকারের কাছে চাই, লাশটা আমাদের বাড়িতে চাই। আমার দুটা ছেলে সেখানে মারা গেছে। আমি দুইটা ছেলে দেশে এনে যদি মাটি দিতে পারি, আমরা এটাই চাই।’
আনোয়ারের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক ভাইয়ের নাম আনোয়ার, এক ভাইয়ের নাম সায়েদ, এক ভাইয়ের নাম মোশাররফ। আনোয়ার গেছে গত ১০ বছর আগে। দুই বছর আগে বাড়িতে আসছে, বাড়িতে আসি বিয়া সাদি করি, ছয় মাস/সাত মাস আছিল। এরপর ওই দেশে গেছে আজকে এক বছর হইছে। গতকালকে ১০টা বাজে আমার খালাতো ভাই একটা ফোন কইরা কইতেছে, আপনাদের টাউনে বড় দোকানে আগুন লাইগছে। এখন আপনারা নামাজ পড়ি দোয়া করেন। এটাই শুইনছি। এরপরে সারাদিন ধরে শুনতেছি আমাদের দোকান জ্বলতেছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আমার ভাইদের বাইর করতে পারে নাই। গতকালকে চারটা-পাঁচটার দিকে শুনছি যে আমার ভাইগুলা পুড়ি গেছে। এখন আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, আমার ভাইদের বাংলাদেশে আনি আমাদের কাছে প্রেরণ করার জন্য।’
দেলোয়ার বলেন, ‘আমার ভাইগুলা যেগুলা পোড়া গেছে, এহন পুলিশের হেফাজতে আছে। এখন ওই দেশের সরকার কোন সময় পাঠাইব সেইটা তো আমরা বলতে পাইরতেছি না। এখন বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা এটাই বলতে চাই, আমার ভাইদের উদ্ধার করি দেশে আনার জন্য।’
একই আবেদন জানিয়েছেন মমিনুল হকের ছেলে মোশারফ হোসেন রবিন ও শ্যালক শরীয়তউল্লা।