পর্যটকদের বরণে সেঁজেছে বান্দরবান
ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ি জেলা বান্দরবান। দর্শণীয় স্থান ছাড়াও জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে পর্যটকদের আবাসনের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টহাউজ এবং গেস্টহাউজগুলোও পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন এবং আলোক সজ্জায় সাজানো হয়েছে।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বান্দরবান রেসিডেন্সিয়াল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, অন্যান্যবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ করা যায়। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম। সরকারি বন্ধের সময় ঈদের ছুটি পড়ে যাওয়ায় হোটেলগুলোতে অগ্রিম বুকিং কম পড়েছে। তবে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
পাহাড় থেকে ঝড়েপড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গসহ অসংখ্য পাহাড়। কি নেই বান্দরবানে। জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের ওপর নির্মিত আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানা আনন্দ দেয় পর্যটকদের। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টাওয়ারে উঠলে দেখা মেলে পাহাড়ের সমুদ্রের। যেন পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ মিতালী গড়েছে নীলাচলে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও হারিয়ে যান এ স্বপ্নের দেশে। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় ও স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পটে গিয়ে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে নির্মিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র যেন মেঘে ভাসছে। মুহূর্তে মেঘ এসে এখানে ছুঁয়ে যাচ্ছে কটেজগুলো।
জেলা শহরের অদূরে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণা স্রোতধারা বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়ের তরুণীরা কোমল তাঁতে তৈরি কাপড় এবং স্থানীয়দের বাগানে উৎপাদিত দেশীয় হরেক রকমের ফল বিক্রি করছে। এ ছাড়া জেলা সদরের বালাঘাটায় নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে পরিচিত বৌদ্ধধাতু স্বর্ণ মন্দির জেলায় পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া রুমা উপজেলায় অবস্থিত রিজুক ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, রহস্যময় কিংবদন্তি বগা লেক এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, তাজিংডং বিজয়সহ দর্শণীয় বহু স্থান। অপরদিকে থানছি উপজেলার রেমাক্রি জলপ্রপাত, নাফাকুম ঝর্ণা, তীন্দু বড় পাথর, বাদুর গুহাসহ অসংখ্য দর্শণীও স্থান রয়েছে। আর পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী পথে নৌকা নিয়ে নৌভ্রমণ তো দারুণ রোমাঞ্চকর।
অপরদিকে বান্দরবানের পাহাড়ে বসবাসরত মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক এবং লুসাইসহ ১৩টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাসের বৈচিত্র্যময় জীবন চিত্র পর্যটকদের কাছে বাড়তি পাওয়া।
জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার শতভাগ সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপদ ভ্রমণের স্বার্থে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। পরিবহন ও আবাসিক হোটেলগুলোতে কোনো ধরনের বাড়তি ভাড়া এবং পর্যটকদের হয়রানির খবর পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’