জন্মদিনেও অনশন, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন লতিফ সিদ্দিকী
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো অনশন করছেন। টানা তিনদিনের অনশনে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে গত রোববার বিকেল থেকে টাঙ্গাইলের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন কর্মসূচি পালন করছেন লতিফ সিদ্দিকী।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ ১৮ ডিসেম্বর তাঁর ৮১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনেও তিনি কোনো খাবার গ্রহণ করেননি। আজ বিকেলে তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী এসে ফুল দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সহকর্মী ও সমর্থকদের দাবি, অনশনের দুই দিন পার হলেও লতিফ সিদ্দিকীর দাবি মানা হয়নি। ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা জানান, হাসপাতালের চার সদস্যের একটি দল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দেখেছেন। অনশনের কারণে তিনি ওষুধ ও খাচ্ছেন না। এতে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।
লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম খসরু বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ওষুধ না খাওয়ায় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁর দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে আগামীকাল বুধবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
গত দুই দিনের মতো আজকেও শরীরে কম্বল জড়িয়ে খাটিয়ার ওপর শুয়ে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। তাঁর দাবি না মানলে তিনি জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে উঠবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এতে যদি তাঁর মৃত্যুও হয় তাহলে তিনি মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে আলিঙ্গন করে নিবেন।
গতকাল রাতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহেল হাজারীর নির্দেশে তাঁর গুণ্ডা বাহিনী স্থানীয় চেয়ারম্যান হযরত তালুকদার, তোতা ও তাঁর ছেলে ছোট আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলারকারীদের গ্রেপ্তার, কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার ও সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি এবং তার বাস্তবায়ন না হলে এখানে আমরণ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। তাই নির্বাচন করতে এসেছি। জনগণ যে রায় দিবে তা মাথা পেতে নেব। কিন্ত এখন দেখছি ভয়াবহ অবস্থা। আমি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। কালিহাতীতে অবস্থান করলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। জনগণ দুর্ভোগে পড়বে। সরকার বিব্রত হোক আমি তা চাই না। আমি আমার দায়িত্ব সর্ম্পকে সচেতন বলেই এখানে এসেছি। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এই হামলাকারীদের জন্য নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এটা দেশের সম্মান, জাতির সম্মান এবং প্রধানমন্ত্রীর সম্মানের প্রশ্ন। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, অনশনের বিষয়টি আমি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো দিক নিদের্শনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন কালিহাতীর সালাউদ্দিন তালুকদার, মারুফ আকন্দ, লতিফ প্রামাণিক ও জয়নাল আবেদীন।
কালিহাতী থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
গত রোববার কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বল্লবভবাড়ি ও সরাতৈল এলাকায় গণসংযোগে করতে গেলে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর কর্মিরা। এ সময় লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে থাকা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও হামলাকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে তাঁর নেতাকর্মীরা আহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন বিকেল থেকেই টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী।