হবিগঞ্জে মাছের মেলা, বাঘাইড়ের দাম ১ লাখ ২০
হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইল মাছের মেলায় একটি বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে আজ বুধবার শেষ হয়েছে।
মেলায় প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের এ বাঘাইড় মাছটি বাজারে এনেছেন সদর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী শাকিল মিয়া। তিনি জানান, মাছটি মেঘনা নদী থেকে ধরা হয়েছে। মেলায় বিক্রি করবেন বলেই তিনি এটি নিয়ে এসেছেন। মাছটির দাম চেয়েছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অনেকেই দাম করেছেন। কয়েকজন ক্রেতা দাম বলেছেন, ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। উপযুক্ত দাম না পেলে তিনি এটি বিক্রি করবেন না।
মেলায় ঘুরে আরো তিনটি বাঘাইড় মাছের দেখা পাওয়া যায়। একটি নিয়ে এসেছেন, লামা পইল গ্রামের মিন্নত আলী। মাছটির ওজন ৩০ কেজি। দাম হাকছেন ৪০ হাজার টাকা। কয়েকজন ক্রেতা এর দাম বলেছেন ২৫ হাজার টাকা। মেঘনা নদীর ভৈরব অংশ থেকে এই মাছটি ধরা পড়ে। সেখান থেকে কিনে নিয়ে আসেন মিন্নত আলী।
এ ছাড়া ২৫ কেজি ওজনের আরো একটি বাঘাইড় মাছ নিয়ে এসেছেন পইল গ্রামের ডালি হাটির নূর মিয়া। তিনি মাছটির দাম হাকছেন ৩০ হাজার টাকা। ক্রেতারা এর দাম বলেছেন ২০ হাজার টাকা। এটিও মেঘনা নদীর ভৈরব অংশে জেলেদের জালে আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছেন নূর মিয়া।
পইল ঢালিহাটির কদর আলী আরেকটি ১২ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম ৩০ হাজার টাকা চাইছেন। তবে ক্রেতারা ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা দাম বলছেন।
হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইল মাছের মেলায় আসা মাছ নিয়ে বিক্রেতা। ছবি : এনটিভি
উমেদনগরের শাহজাহান মিয়া একটি আইড় মাছ আজমিরীগঞ্জ উপজেলা থেকে এনেছেন। ওই মাছটির দাম ৬০ হাজার টাকা চাইছেন তিনি। ক্রেতারা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বলছেন।
মেলায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে বেশ কয়েকটি বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয়েছে। মেলায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মাছ কিনতে ও মেলা পরিদর্শন করতে আসে।
পইল গ্রামের বাসিন্দা ডা. সৈয়দ আবরার জাবের জানান, প্রায় ২০০ বছর ধরে পইল এলাকায় মাছের মেলা হয়ে আসছে। ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন এবং দুটি মাছ কিনেছেন। এ ছাড়াও ছেলেমেয়েরা ঘুরে আনন্দ উপভোগ করেছেন।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, রুই, কাতল, বোয়াল, মৃগেল, শিং, মাগুর, কই, পাবদা, চিংড়ি, চিতলসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। হবিগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে ক্রেতারা এসেছেন এখানে মাছ কিনতে।
মেলায় জেলা ছাড়িয়ে মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল ক্রেতা ও বিক্রেতা আসেন। এ ছাড়া মেলায় নানা কৃষিজ পণ্য, হস্তশিল্প, খেলনা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, শীতকালীন পোশাক, মিষ্টান্নসহ সহস্রাধিক স্টল বসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের মেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে।
অপরদিকে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পইল গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হয়েছে নানারকম পিঠা-পুলি। মেলা উপলক্ষে পইল ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ধনী-গরিব সবাই তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল ইউনিয়ন পরিষদ।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক জানান, ২০০ বছর ধরে এখানে মেলা চলে আসছে। দিনে দিনে মেলাটি বিস্তৃতি লাভ করছে। কিন্তু মেলায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মারাত্মক অপ্রশস্ত। বারবার বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও এটি বড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের তেমন কোনো সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে না।
মেলা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ।