পর্যটকদের নিরাপত্তায় বান্দরবানে কড়াকড়ি
বান্দরবানের সীমান্তবর্তী রাঙামাটির সিদ্ধুপাড়া থেকে অপহৃত দুই পর্যটক ও গাইডকে সন্ধানের পাশাপাশি নানা বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যৌথ বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
গত ৪ অক্টোবর সিদ্ধুপাড়া থেকে জাকির হোসেন মুন্না, আবদুল্লাহ আল জোবায়ের ও বান্দরবানের রুমা উপজেলার পর্যটক গাইড মাংসাই ম্রো নিখোঁজ হন।
রাঙামাটির বড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতমং মারমা দুই যুবকের বরাত দিয়ে জানান, বড়তলী ইউনিয়নের সিদ্ধুপাড়া থেকে অস্ত্র দেখিয়ে ওই তিন ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সদস্যরা।
আজ শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও অপহৃতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, অপহৃত ঢাকার দুই পর্যটক জাকির হোসেন মুন্না ও আবদুল্লাহ আল জোবায়ের স্থানীয় পর্যটক গাইড মাংসাই ম্রোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওই দুই পর্যটক প্রায়ই বান্দরবান ভ্রমণে আসতেন এবং ম্রো যুবকও মুন্নার ঢাকার বাড়িতে গিয়েছেন একাধিকবার। মুন্নার ব্যবসা ও মাংসাই ম্রোর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতেন তাঁদের ঘনিষ্ঠজনরাও।
পুলিশ সুপার আরো জানান, রাইক্ষ্যংপুকুর পাড়ার বাসিন্দাদের আতিথেয়তা ও বন্ধুর প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকেই নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে ভ্রমণে উদ্দেশ্যে অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করেন জাকির হোসেন মুন্না ও আবদুল্লাহ আল জোবায়ের। এ ব্যাপারকে নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে যৌথ বাহিনী।
যৌথ বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপহৃত দুই পর্যটকের বন্ধু মাংসাই ম্রোর বড় ভাই কার্বারি প্রাচিং ম্রোর সঙ্গে অপহরণকারীদের যোগসূত্র রয়েছে এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কার্বারি প্রাচিং ম্রোসহ স্থানীয়দের ওপরও যৌথ বাহিনীর নজরদারি আছে বলে দাবি করেছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বান্দরবানের সেক্টর কমান্ডার অলিউর রহমান বলেন, ‘অপহৃত দুই পর্যটক ও তাঁদের স্থানীয় নিখোঁজ বন্ধুর সন্ধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ বাহিনীর সাতটি টহল দল অভিযান চালাচ্ছে।
ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বান্দরবানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিজিবির সেক্টর কমান্ডার অলিউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিবন্ধিত পর্যটক গাইড ছাড়া পর্যটকরা কোথাও ভ্রমণে যেতে পারবেন না। আর পর্যটকদের নাম-ঠিকানা ও দর্শনীয় স্থান কোথায় কোথায় যাবেন বিষয়গুলো স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তাহলে পর্যটকদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হবে না এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়লে সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চল। পর্যটকরা যদি নিরাপদে এবং বিনা বাধায় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাহলে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন আরো বাড়বে। বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প। এ অঞ্চলের পর্যটনের উন্নয়নে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আন্তরিক বাহিনীগুলো।’
‘তবে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে আতঙ্ক নেই’
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডার অলিউর রহমান জানিয়েছেন, বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পর্যটকরা নিরাপদে বান্দরবানের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যা এবং রাঙামাটি সীমান্তে দুজন পর্যটক অপহরণের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে যে কোনো স্থানে হত্যা এবং অপহরণের ঘটনা ঘটলে অঞ্চলগুলোতে পর্যটকের আগমন কমে যায় এটিই স্বাভাবিক। বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনায় বান্দরবানেও পর্যটকদের আগমন কমেছে। বিশেষত বিদেশি পর্যটকদের বেশ কয়েকটি বুকিং বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ঘটনাগুলো শান্তিপ্রিয় বান্দরবানের পর্যটনশিল্পে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ সম্প্রীতির জেলা হিসেবে বান্দরবানের খ্যাতি রয়েছে বিদেশেও।’
‘মুক্তিপণ দাবির খবর নির্ভরযোগ্য নয়’
অপহৃত দুই পর্যটকের বন্ধু আরাফাত ইসলাম রাসেল ও আবদুর রউফ বলেন, ‘অপহৃতদের মুক্তিপণ বাবদ অপহরণকারীরা ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে খবরটি কার্বারি প্রাচিং ম্রো আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিপণের খবরটি নির্ভরযোগ্য মনে হয়নি। কারণ অপহরণকারীদের এবং অপহৃতদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো কথা হয়নি। বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে মুক্তিপণের কথাগুলো অপহৃতদের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। অপহৃতদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে অপহৃতদের খোঁজে আমরা ঢাকা থেকে বান্দরবান এসেছি। প্রেসক্লাবে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও দেখা করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে অপহৃতদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’