ফ্রান্স থেকে মংলায় এসেছে পচা গম
নিম্নমান ও খাবার অনুপযোগী হওয়ায় ফ্রান্স থেকে আমদানি করা ২১ হাজার টন গম গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে নিম্নমানের গম নিয়ে আসা সাইপ্রাস পতাকাবাহী এমভি পিনটেল নামের জাহাজটি মংলা বন্দরের হারবারিয়াতে ছয়দিন ধরে ভাসছে।
গম না নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মংলা বন্দর আমদানি গম খালাস তদারকি কমিটির আহ্বায়ক আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম। আটকে যাওয়া গমের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম জানান, ফ্রান্স থেকে আমদানি করা গমবাহী এই জাহাজটি ১২ অক্টোবর দুপুরে মংলা বন্দরে প্রবেশ করে। গমের মান পরীক্ষা কমিটির ছয় সদস্য পরদিন ১৩ অক্টোবর জাহাজে গিয়ে গম সরেজমিনে দেখেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় গম নিম্নমান এবং খাবার অনুপযোগী থাকায় এই গম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়। তিনি জানান, বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ আমদানিকারক ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য এই গম আমদানি করেছে ঢাকার ইমপেক্স কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
সাইপ্রাস পতাকাবাহী এমভি পিনটেল জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মুরতজা আলী বাপ্পী জানান, জাহাজটিতে ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ হাজার ৫০০ টন গম খালাসের পর বাকি ২১ হাজার টন গম নিয়ে জাহাজটি ১২ অক্টোবর মংলা আসে।
সৈয়দ মুরতজা প্রশ্ন রেখে বলেন, যে গম চট্টগ্রামে খালাস হতে পারে সেই একই গম মংলায় খালাস হতে দোষের কী আছে। তিনি কিছু গমের নমুনা দেখিয়ে বলেন, গমে একটু ডাস্ট বেশি। তবে অনুপযোগী নয়।
সৈয়দ মুরতজা জানান, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মান নিয়ন্ত্রক কমিটি ১৩ অক্টোবর জাহাজটি পরিদর্শন করে গম সংগ্রহ করেন। তবে পরীক্ষায় কী এসেছে তা তাঁরা জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমরাও শুনছি যে গম নিম্নমানের বলে রিপোর্ট এসেছে।’
এদিকে গম খালাস করতে দেরি হওয়ায় সৈয়দ মুরতজা খাদ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি জানান, এই জাহাজ থেকে গম খালাসের জন্য স্টিভেডর নিয়োগ করা হয়েছে খালিদ ব্রাদার্সকে।
খালিদ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি স্টিভেডর নিয়োগ হলেও খালাসের কাজ শুরু করার কোনো নির্দেশনা পাননি। খাদ্য বিভাগ সিদ্ধান্ত নিলেই তবে তিনি গম খালাসের কাজ শুরু করবেন। তবে তিনি জানান, এই জাহাজের গম খালাসে একটু দেরি হচ্ছে।
মংলা বন্দর আমদানীকৃত গম খালাস তদারকি কমিটির অন্যতম সদস্য, খাদ্য চলাচল ও নিয়ন্ত্রক নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের মহাপরিচালক ছাড়া তাঁরা কোনো মিডিয়াকে কিছু বলতে পারেন না। তিনি বলেন, খুলনায় গম পরীক্ষার জন্য কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র নেই। তাই পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই গম সম্পর্কে ব্রিফিং করবেন।
নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, তাঁদের আমদানি করা গম খালাসের আগে তা পরীক্ষার জন্য একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রামে অবস্থান করতেন। কিন্তু দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশে ফেরত চলে গেছেন। এই কারণে চট্টগ্রামে কী হয়েছে, আর কীভাবে খালাস হলো তা বলতে পারবেন না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ভালো গম নামাতে পারে আর বাকি যা ছিল তা খারাপ হতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের চোখের দেখায় গম ভালো মনে হয়নি। এই গম যে কেউ কিছুদিন মজুদ করলেই সমস্যায় পড়বেন। তখন পোকায় গমের বেশির ভাগ অংশ খেয়ে ফেলবে। যে কারণে তাঁদের কমিটি খালাস না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আমদানি করা গমের মূল্য জানাতে পারেননি নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম। তবে তিনি বলেন, বাজারে গম ২১ হাজার টাকা করে টন বিক্রি হয়, সে হিসাবে আমদানি করা গমের মূল্য ৪৪ কোটি টাকা হতে পারে।
এদিকে মংলা বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, এমভি পিনটেল জাহাজটিতে ১৯ জন ক্রু রয়েছেন। মংলা বন্দরের নিয়ম হলো পণ্যবোঝাই জাহাজ হারবারিয়াতে এসে প্রথম নোঙর করে। পরে খালাসের কাজ শুরু হলে বয় বা জেটিতে আনা হয়। আবার পণ্য বেশি থাকলে হারবারিয়াতে খালাস করা হয়। তবে এই জাহাজটি ছয়দিন ধরে মংলা বন্দরের হারবারিয়াতে অবস্থান করছে। কারণ তাদের জানা নেই।