জাতিসংঘের মহাসচিব উদ্বিগ্ন
বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ব্যাপারে জাতিসংঘ ভালোভাবে অবগত। মহাসচিব বান কি মুন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। গতকাল বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিয়মিত মধ্যাহ্ন ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক।
জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে বর্তমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকালের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী গত ৪০-৫০ দিন তাঁর নিজ অফিসে ‘বন্দী’ অবস্থায় আছেন। সম্প্রতি সরকার তাঁর (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অথচ তখন জাতিসংঘসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংলাপের কথা বলছে এবং প্রধানমন্ত্রী...।
এসব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে মুখপাত্র ওই সাংবাদিককে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনার প্রশ্নটি শুনতে চাই।’
তখন ওই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ বা পশ্চিমা কোনো দেশের প্রভাব বা কর্তৃত্ব সহ্য করবে না বলে জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবস্থান কী হবে?’
জবাবে স্টিফান বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি মনে করি, আমরা বাংলাদেশে উত্তেজনার বৃদ্ধি দেখছি এবং চলমান সহিংসতা, রাজনৈতিক সহিংসতা দেখছি। এবং (তাই) আবারও তিনি (জাতিসংঘ মহাসচিব) বর্তমান সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
সাংবাদিক ম্যাথু রাসেল লি প্রশ্ন করেন, ‘আমি জানতে চাই, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছাড়াও সেনাবাহিনীকে উসকানির অভিযোগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আমি এটি এ কারণে জানতে চাইছি যে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানো এক নথিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মোহাম্মদ মতিউর রহমানের নাম রয়েছে। জানা গেছে, তিনি ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্য ডিআর কঙ্গোতে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। আমি আপনার কাছে আগেও কয়েকবার জানতে চেয়েছি, আপনি বলেছেন, জাতিসংঘ এসব ব্যাপারে অবগত। কিন্তু বাংলাদেশে যে সহিংসতা চলছে, তাতে সামরিক বাহিনীর সৈন্যদের অবদান রয়েছে। আমি এই নামটা বললাম শুধু উদাহরণ হিসেবে। এসব লোকের ব্যাপারে বিবেচনা করতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন বিভাগ কী করেছে? সেখানে অন্য বিবাদও আছে...।’
প্রশ্নটি শেষ করার আগেই ম্যাথুকে থামিয়ে দিয়ে স্টিফান ডুজারিক বলেন, ‘আমি আপনার প্রশ্ন বুঝতে পেরেছি। গতকালও যখন আপনি এই প্রশ্ন করেছিলেন, তখন আমি আমার সাধ্যের মধ্যে আপনাকে উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি। আপনি জানেন, যে বিষয় সম্পর্কে বা যাঁদের সম্পর্কে আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্য হতে হলে কিছু নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই নির্দিষ্ট বিষয়ে যদি আমার কাছে কোনো তথ্য আসে, তবে তা আমি অবশ্যই আপনাকে জানাব।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রমাগত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। এবং গতকাল (মঙ্গলবার) জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ আট ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ৩০ দিনের জন্য অন্তরীণ রয়েছেন। তো, এটা কি...?
এ প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, ‘আমি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনটি দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশে বর্তমান উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য এবং আমরা যে সহিংসতা দেখছি, তা বন্ধে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বানকে পুনর্ব্যক্ত করতে হবে। জনাব লি, এবার আপনি শেষ কথা বলবেন।’