পাহাড়ে পাহাড়ে বর্ণিল বৈসাবি
শহরের অদূরে এক নদী। খুব ভোরবেলা সে নদীর পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে হাজারো মানুষ। পূর্বের আকাশে সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই নদীর স্রোতে তারা ভাসিয়ে দিল ফুল। ফুলের সঙ্গে ভাসিয়ে দিল বিগত দিনের জরা আর গ্লানি। সুখের আশায় স্বাগত জানাল আগামীকে। স্বাগত স্বাগত হে নতুন জীবন!
এই ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়েই শুরু হলো পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। ত্রিপুরা, মারমা আর চাকমা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব উৎসব বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজুর আদ্যাক্ষর নিয়ে যৌথ এ বর্ষবরণ উৎসবের নাম হয়েছে বৈসাবি।
বৈসাবির মধ্য দিয়ে সমতলের থেকে অনেকটা ভিন্ন আঙ্গিকে নববর্ষকে বরণ করে নেয় পাহাড়িরা। মূলত চৈত্র মাসের শেষ দুদিন আর বৈশাখের প্রথম দিন মিলিয়ে মোট তিন দিনব্যাপী চলে এ উৎসব। আর সে উৎসবে বর্ণিল হয়ে ওঠে পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ে পাহাড়ে বাজতে থাকে আনন্দের সুর।
আজ শুক্রবার খাগড়াছড়িতে শুরু হলো তিন দিনের বৈসাবি উৎসব। ভোরেই শহরসংলগ্ন চেঙ্গি নদী আর স্থানীয় ছড়া ও খালে ফুল ভাসিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের সূচনা করা হয়।
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে বিদায় দেয় প্রায় বিগত বছরের দুঃখ, গ্লানিকে, বরণ করে নেয় নতুন বছর।
পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গী নদীর তীরে নামতে শুরু করে মানুষের ঢল। নববর্ষের আনন্দে মেতে ছোটরা একে অপরকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।
বহুবর্ণিল পাহাড়ি এ উৎসবে শামিল হতে, নিখাদ আনন্দের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিতে সমতল থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক বর্তমানে হাজির হয়েছেন খাগড়াছড়িতে। পাহাড়ি জনপদ সেজে উঠেছে রঙিন সাজে।
এবারের বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, মারমা উন্নয়ন সংসদ, মারমা ঐক্য পরিষদ, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদসহ বেশ কিছু সংগঠন নৃগোষ্ঠীর বিচিত্র ঐতিহ্য তুলে ধরতে সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক আয়োজন, খেলাধুলাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।