ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবকে ঘিরে সেজেছে বান্দরবান
বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ি পল্লীগুলো সেজেছে নতুন সাজে। জেলায় এবারও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, ফানুস বাতি উড়ানো, মঙ্গল প্রদ্বীপ প্রজ্বালন, মঙ্গল রথযাত্রাসহ তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ওই দিন রাতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে আকাশে উড়ানো হবে শতশত ফানুস বাতি। আগামী ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় আসাংম্রাইদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের উদ্দেশে আয়োজিত মঙ্গল রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এ ছাড়া ওই দিন পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে পিঠা তৈরির উৎসব এবং ফানুস বাতি উড়ানো হবে। চলবে মারমা তরুণ-তরুণীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালাও।
মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন জানায়, তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর পাহাড়ি মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তাঁর মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস বাতি। পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়েরা নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে।
মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, আকাশে উঠার আগেই যে ব্যক্তির ফানুস মাটিতে পড়ে যায় পাহাড়িরা তাঁকে পাপী লোক হিসেবে চিহ্নিত করে। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে ফানুস উড়িয়ে পাহাড়িরা নিজেদের পাপ মোচন ও পাপী মানুষ খুঁজে বের করে।
এ কারণে ফানুস আকাশে উড়ানোর সময় পাহাড়িরা মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ বলতে থাকে। অর্থাৎ শুভ মুক্তি। পাহাড়ি পল্লীগুলো এবং ক্যায়াং থেকে রং বেরঙের শত শত ফানুস বাতি উড়ানো হয়। অপরদিকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’কে ঘিরে বান্দরবানে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে ধুম পড়েছে পিঠা তৈরির। পাহাড়ি তরুণ-তরুণী সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশীদেরবাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করে এ উৎসবে।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- মঙ্গল রথযাত্রা। বিশাল আকৃতির ময়ূর তৈরি করে তার ওপর একটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে টেনে পুরো শহর ঘুরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই পাশে উপচেপড়া ভিড় জমে।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। উৎসবকে ঘিরে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। তবে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে ফানুস বাতি উড়ানো এবং পিঠা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানমালা চলছে কয়েকদিন আগে থেকেই। এবারও উৎসব আয়োজন কমিটি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ফানুস বাতি উড়ানো, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ এবং ময়ূর রথযাত্রা ও বির্সজন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসাহ উদ্দীপনায় পোয়ে উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।