ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে মেতেছে পাহাড়িরা
বান্দরবানে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে মেতেছে পাহাড়িরা। পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী এবং শিশু-কিশোররা আজ বুধবার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, স্বর্ণ মন্দির জাদী, রামজাদী মন্দিরসহ বিভিন্ন ক্যায়াংয়ে ক্যায়াংয়ে গিয়ে বৌদ্ধভিক্ষুদের মাঝে ছোয়াইং দেন। কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে দায়ক-দায়িকাদের মধ্যে ধর্ম-দেশনা দেন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উচহ্লা ভান্তে।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবকে ঘিরে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে হাজারো প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। চন্দন কাঠের জলে বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানো হয়। অনুষ্ঠানে মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অন্য সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরাও ভিড় জমায়।
স্থানীয় পুরোনো রাজবাড়ি মাঠে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাচে-গানে মাতিয়ে তোলেন মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। চলে সুর আর ছন্দের প্রতিযোগিতা। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢল নামে পাহাড়ি-বাঙালি মানুষের। বেড়াতে আসা পর্যটকরাও ভিড় জমিয়েছিলেন অনুষ্ঠানস্থলে। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া পাঁচজন পাহাড়ি তরুণ-তরুণীকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। অন্যদের মধ্যে সেনাবাহিনীর-৬৯ রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, জেলা ও দায়রা জজ শফিকুর রহমান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব আয়োজক কমিটির উদ্যোগে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে আকাশে ওড়ানো হয়েছে রংবেরঙের শত শত ফানুস। ফানুসে ফানুসে রঙিন হয় বান্দরবানের রাতের আকাশ।
তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে, বৌদ্ধধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তাঁর মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে আকাশে ওড়ানো হয় শত শত ফানুস।
মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, আকাশে ওঠার আগেই যে ব্যক্তির ফানুস মাটিতে পড়ে যায় তাঁকে ‘পাপী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে ফানুস উড়িয়ে পাহাড়িরা নিজেদের পাপ মোচন করে থাকে। এ কারণে ফানুস আকাশে ওড়ানোর সময় পাহাড়িরা মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ অর্থাৎ ‘শুভ মুক্তি’ উচ্চারণ করতে থাকে।
বান্দরবানে আজ বুধবার ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাচে-গানে মাতালেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে আকাশে ওড়ানো হচ্ছে ফানুস।