বরগুনায় রিফাতের দাফন সম্পন্ন, গ্রেপ্তার ৩
বরগুনায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত রিফাত শরিফের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এদিকে, রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত দুজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন এজাহারভুক্ত আসামি হাসান ও চন্দন এবং সন্দেহভাজন নাজমুল হাসান। হাসান ও নাজমুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয় আজ। চন্দনকে গ্রেপ্তার করা হয় গতকাল বুধবার রাতে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে রিফাতকে তাঁর স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় ।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেছেন।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, হাসান মামলার ৯ নম্বর আসামি, চন্দন ৪ নম্বর আসামি। এ ছাড়া নাজমুল হাসানের নাম এজাহারে নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ মর্গে রিফাতের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরগুনার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
বরগুনা কামিল (মডেল) মাদ্রাসা জামে মসজিদের ইমাম কারি মো. সোলায়মানের ইমামতিতে জানাজায় বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পৌর মেয়র শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ অংশ নেন।
জানাজায় উপস্থিত সবার কাছে রিফাতের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান তাঁর বাবা দুলাল শরিফ ও চাচা আবদুল আজিজ শরিফ। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান। তাঁরা রিফাতের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়েশা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরিফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ধারালো অস্ত্রের ছয়টি আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে বরগুনার রিফাত শরিফের মৃত্যু হয় বলে জানান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রিফাতের গলায়, মাথায়, বুকে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতগুলোর মধ্যে গলায়, মাথায় ও বুকে তিনটি গুরুতর জখম রয়েছে, বাকি তিন-চারটি আঘাতের চিহ্ন ততটা গুরুতর নয়।’
ডা. জামিল আরো বলেন, বিশেষ করে গলার আঘাতের কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রগ কেটে গেছে। এর ফলে এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে, যা সময়ের ব্যবধানে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত বিষয়গুলো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই নিশ্চিত করে উল্লেখ করা হবে।
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের আওতাধীন মর্গ সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি আঘাতের (ধারালো অস্ত্রের) চিহ্ন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গুরুতর।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বোর্ড/কমিটি গঠন করে। যে বোর্ডে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মাইদুল হোসেন ও ডা. সোহেলী আক্তার তন্নী।
এর আগে শেবাচিম হাসপাতালের লাশ রাখা কক্ষ থেকে সকাল ১০টার দিকে রিফাত শরিফের মরদেহ মর্গে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রিফাতের মরদেহ নিয়ে দুপুর ১টার দিয়ে স্বজনরা সড়কপথে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করে।
এদিকে বুধবার রিফাত শরিফের মৃত্যুর পর পরই বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম মরদেহের সুরতহাল করেন। যে প্রতিবেদনে নিহতের মাথার ওপর কোপের জখম, গলার ডান পাশে লম্বা কোপের জখম (সেলাই করা), বুকের ডান পাশে কাঁধ সলগ্ন কোপের জখম (সেলাই করা), বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচে কোপের জখম এবং বৃদ্ধা আঙুলে কোপের জখমের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।