কয়লাবোঝাই কার্গোটি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়নি
মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে কয়লাবোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবির দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখনো এটি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়নি। ধীরে ধীরে ডুবতে ডুবতে আজ বৃহস্পতিবার কার্গোটি পানির নিচে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। ফলে ছোট বড় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শুধু একটি ভাসমান ড্রাম দিয়ে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। আর ঘটনাস্থল দেখভাল ও নজরদারি করছেন বন বিভাগের কর্মীরা।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি উত্তোলন করা যাবে কি না এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকার ভাই ভাই স্যালভেজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাইম হোসেন ও ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান আজ সকালে পশুর নদের জয়মনি এলাকায় দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তাঁদের দাবি, জোয়ারের পানি আর পানির স্রোত কমলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
এ দিকে বন বিভাগের দায়ের করা মামলায় আটক জাহাজের মাস্টার বুলু গাজীকে আজ দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
এমভি জিয়া রাজ নামক কার্গো জাহাজটি কয়লা নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে পশুর নদে ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনার পর গতকাল বুধবার রাতে কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়াস্থ শেখ ব্রাদাসের পক্ষে মংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
জিডিতে বলা হয়েছে, মংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া এলাকায় অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের কয়লা বহনকারী জাহাজটি নওয়াপাড়া যাওয়ার পথে পশুর নদীতে ডুবে যায়।
এদিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, দুর্ঘটনাস্থলে বনরক্ষীদের দুটি টিম অবস্থান ও সার্বিক বিষয়াদি তদারকি করছে।
জাহাজটির উদ্ধার তৎপরতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হক জানান, যত দ্রুত সম্ভব জাহাজটি উদ্ধার করতে মালিকপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরো জানান, প্রথম পর্যায়ে ডুবে যাওয়া জাহাজের ভেতরে থাকা কয়লা অপসারণ এবং পরে জাহাজটি উদ্ধার করা হবে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। ডুবন্ত জাহাজটির কারণে যাতে নৌযান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে বিষয়েও নজরদারি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ‘সেভ দ্য সুন্দরবন’ সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েক মাসে ক্লিংকার, তেল, সার ও সর্বশেষ কয়লাবাহী জাহাজ ডুবেছে সুন্দরবন এলাকায়। এ কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি আমাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতিটি বড় জাহাজে ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনা হবে। এই কয়লা সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্ট থেকে নামিয়ে ছোট ১০-১২টি জাহাজে (লাইটার ভেসেল) তা মংলায় আনা হবে। তাতে বছরে প্রায় ৫০০ জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে। ২৪ ঘণ্টা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, হর্নের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণীকূলের অভয়ারণ্য নষ্ট করবে।
এদিকে আজ দুপুরে সুন্দরবন পরিদর্শনে এসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এ ব্যাপারে বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌ দুর্ঘটনা ও বন্যপ্রাণী হত্যাসহ বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাব।