রিফাত হত্যা মামলা : দুজনের স্বীকারোক্তি, তিনজন রিমান্ডে
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে দুজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ সোমবার বিকেলে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জবানবন্দি দেওয়া দুজন হলেন মামলার ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা আসামি তানভীর।
এদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তিনদিন রিমান্ড শেষে আসামি নাজমুল হাসানকে একই আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন নামের অপর দুজনকে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী সেই আবেদনও মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি অলি এবং হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা তানভীর আদালতে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা সাগর, সাইমুন ও নাজমুল আহসানের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদের মধ্যে নাজমুল আহসান আগেও তিন দিনের রিমান্ডে ছিল। তিনদিনের রিমান্ড শেষে আজ আবারো তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, এ মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেপ্তার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌছায়নি। তাই তাকে আদালতে তোলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আজ বেলা ৩টার দিকে রিফাত হত্যার ঘটনায় অগ্রগতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, আরো একজন আসামিকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা যাবে না।
পুলিশ সুপার বলেন, রিফাত হত্যার সব আসামি ধরতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই সব আসামিকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হবে পুলিশ। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট নয়জন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন চন্দন ওরফে জয় চন্দ্র সরকার (২১), মো. হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, মো. নাজমুল হাসান (১৮), তানভীর (২২), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এ হত্যার মূল হোতা সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, তার ভাই রিশান ফরাজীসহ অন্যরা।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেছেন।