ছাত্রীদের পাস একটু বেশি মনে হচ্ছে, ছাত্রদেরটাও বাড়াতে হবে
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গত কয়েক বছরের মতো এবারও ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা ভালো ফল করেছে। এ বিষয়টি নজরে এনে ‘জেন্ডার সমতা’ আনতে ছাত্রদের পাসের হার বাড়ানোর ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ সকালে ফলের অনুলিপি হাতে পেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পরীক্ষার ফল হাতে পেয়ে লক্ষ করছি, পাসের দিক থেকে আমাদের ছাত্রীসংখ্যা একটু বেশি মনে হচ্ছে। জেন্ডার সমতার কথা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। এখন আমাদের বলতে হয়, আমাদের ছাত্রদের সংখ্যাটা বাড়াতে হবে, তাদের পাসের হারটাও বাড়াতে হবে, যাতে জেন্ডার সমতাটা এসে যায়। এই বিষয়টার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বুধবার সকাল ১০টায় গণভবনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন বোর্ডগুলোর প্রধানরা। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফল অনুযায়ী, ১০টি শিক্ষাবোর্ডে এবারের গড় পাসের হার শতকরা ৭৯.৯৩ ভাগ। এ ছাড়া জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ শিক্ষার্থী। তিনি এই ফলকে ভালো বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভালো ফলের জন্য শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি যারা ফেল করেছে, তাদের জন্যও শুভকামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমি খুবই আনন্দিত। মাত্র ৫৫ দিনের মধ্যে এইচএসসি আলিম, এইচএসসি বিএম ও ডিআইবিএস পরীক্ষার ফল এত দ্রুত প্রকাশ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছলেন। শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না, সেটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই খুদাকে প্রধান করে শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই নীতিমালা জাতির পিতার কাছে তিনি হস্তান্তর করেছিলেন, কিন্তু জাতির পিতার হত্যার পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি’, বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর ২১ বছর ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ওই শিক্ষা নীতিমালা খুঁজে বের করি ও নতুন করে আবার একটা কমিটি করে দিই একটা যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করবার জন্য। আমাদের শিক্ষা নীতিমালাটাও প্রায় প্রণীত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা ২০০১ আর সরকারে আসতে পারিনি। সেই সময় আমাদের যেটা উদ্যোগ ছিল যে, সাক্ষরতার হার বাড়ানো, বিজ্ঞান শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষার ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। তার ফলও জাতি পেতে শুরু করেছিল। ৪৫ ভাগ থেকে আমরা ৬৫ ভাগে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ইউনেস্কো আমাদের একটা পুরস্কারও দিয়েছিল।’
‘এরপরে আমরা আট বছর পরে সরকারে আসি, তখন আমরা দেখি আমাদের সাক্ষরতার হার কমে যায়। আর সেই শিক্ষা নীতিমালাটাও বাস্তবায়ন হয়নি। আবার আরেকটা কমিটি করা হয়, কিন্তু সেটা আর কার্যকর হয়নি। ২০০৯ সালে আবার যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন আবার একটা কমিটি করি এবং সেই শিক্ষা নীতিমালা আমরা প্রণয়ন করি এবং সর্বপ্রথম একটা শিক্ষা নীতিমালা আমরা গ্রহণ করি এবং তার বাস্তবায়ন আমরা করে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রত্যেকটা পরীক্ষা সময়মতো হবে এবং ফলও সময়মতো হবে যেন আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো সময় নষ্ট না হয়, তারা যেন সময়মতো পরবর্তী সময়ে ভর্তি হতে পারে। এ জন্য ৬০ দিনের একটা সময় আমরা বেঁধে দিয়েছিলাম, আমি ধন্যবাদ জানায় প্রতিটা বোর্ড, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ওই সময় বেঁধে দেওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটা পরীক্ষার ফল ৬০ দিনের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৭৩.৯৩ ভাগ পাস করেছে, এটা যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য, ভালো। আমি মনে করি, আমরা শিক্ষার দিকে আরো মনোযোগ দিলে এ রেজাল্ট আরো ভালো হবে। আমরা প্রথমবার যখন ক্ষমতায় আসি তখন ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নামটা আমি এই কারণেই দিয়েছিলাম যে, তখন আমরা দেখতাম যে, বিজ্ঞান পড়ার প্রতি ছেলেমেয়েদের আগ্রহ খুব কম ছিল।’
বুধবার সকাল ১০টায় গণভবনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন বোর্ডগুলোর প্রধানরা। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। সংগৃহীত ছবি