‘ব্যক্তিস্বার্থের জন্যই মিথ্যাচার করেছেন প্রিয়া সাহা’
ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্যই প্রিয়া সাহা পুরো বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের কাছে মিথ্যাচার করেছেন বলে দাবি করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।
গতকাল শনিবার বিকেলে পিরোজপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন রেজাউল করিম।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারি গ্রামের মেয়ে প্রিয় বালা বিশ্বাস। তিনি প্রিয়া সাহা নামে আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কোনোভাবেই কোনো ধর্মের ভিত্তিতে কারো প্রতি কোনো নির্যাতন বা অবিচার বাংলাদেশে হয় না। সারা দুনিয়ায় এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ আর দ্বিতীয়টি দেখা যাবে না। আমার নির্বাচনী এলাকা পিরোজপুরের নাজিরপুরে যেখানে প্রিয় বালাদের বাড়ি, সে অঞ্চলে হিন্দু-মুসলিম দীর্ঘদিন সম্প্রীতির ভেতর বসবাস করে। এখানে কোনো গুম হয়নি, কোনো অত্যাচার নেই, কোনো অবিচার নেই। যে অভিযোগ প্রিয় বালা বাইরে উত্থাপন করেছেন, এটা সর্বৈবভাবে অসত্য, মিথ্যা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা, একটা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না। আমাদের অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো লোক প্রিয় বালার এ অভিযোগের সঙ্গে একমত নয়।’
কী কারণে এই অভিযোগ—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয় বালা একটি এনজিও করেন। এই এনজিওটি বিদেশি সাহায্যপুষ্ট একটি এনজিও। হতে পারে, কোনো বিদেশি অথবা অন্য কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের মদদপুষ্ট হয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করার একটি অপপ্রচেষ্টা বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।’
নাজিরপুরের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবি, পিরোজপুরের নাজিরপুরে হিন্দুদের নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাঁরা সম্প্রীতির মধ্য দিয়েই নাজিরপুরে শান্তিতে বসবাস করছেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পিরোজপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্র শেখর হালদার বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মতামতটা উনি (প্রিয়া সাহা) ব্যক্ত করেছেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। বিশেষ করে, আমরা পিরোজপুরের মানুষ কখনোই এ ধরনের চরম সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে পড়িনি এবং এটা অনুভবও করি না। উনার বক্তব্য একান্তই উনার নিজস্ব ব্যাপার।’
চন্দ্র শেখর হালদার আরো বলেন, ‘হয়তো এখানে উনার ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু আমরা পিরোজপুরের মানুষ, সর্বোপরি বাংলাদেশের সব মানুষ অসাম্প্রদায়িক পরিবেশের মধ্যেই বসবাস করি। আমরা একটা রাজনৈতিক সংগঠনের লোক হিসেবে ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত বিব্রত। আমরা আশা করব, উনি যেন উনার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং উনি যেন জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কারণ, বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের কোনো বক্তব্য উনার আন্তর্জাতিক দরবারে উপস্থাপন করাটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’
নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার বলেন, ‘নাজিরপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ হিন্দু কমিউনিটি বাস করে। এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা আজ পর্যন্ত হয়নি। একাত্তরে যেটা হয়ে গেছে, ২০০১ সালেও একটা তাণ্ডব গেছে, তখনো এখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রিয় বালা যেটা বলেছেন, সেটা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটা কৌশল হতে পারে। আমরা হিন্দু-মুসলমানরা তো এখানে স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করি। সামান্য কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা করি। এটা ভবিষ্যতে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারাও হতে পারে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’
এ সময় ট্রাম্প জানতে চান, ‘কারা জমি দখল করেছে? কারা বাড়ি দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় পলিটিক্যাল শেল্টার (রাজনৈতিক ছত্রছায়া) পায়।’
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের বিবৃতিতে বাংলাদেশি ওই নারীকে মিসেস সাহা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা যায়, ওই নারীর নাম প্রিয়া সাহা।
প্রিয়া সাহা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামের একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।