অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে এমএনপির ৭৯ সদস্য
আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন বান্দারবানের পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) ৭৯ সদস্য। এর আগে সংগঠনের সশস্ত্র দুটি পক্ষের ব্যবহৃত ৬০টি অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতাঝিড়ি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির ৭৯ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিইয়ং ম্রো জানান, আজ এমএনপি সশস্ত্র সংগঠনের মেনরুম ম্রো গ্রুপ এবং লুইপ ম্রো গ্রুপের মোট ৭৯ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার শফিকুর রহমান, বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়ন কমান্ডার নকিব আহমেদ চৌধুরী, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যৈশহ্লাসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১১ সালে বান্দরবানে ম্রো যুবকদের নিয়ে এমএনপি নামের সশস্ত্র সংগঠনটি গঠিত হয়। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারেও ম্রো সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সংগঠন এমএনপি রয়েছে। অনেকটা ওই আদলেই বান্দরবানের পাহাড়ে এমএনপি গড়ে তোলা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম দিকে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কথা বলা হলেও পরবর্তী সময়ে দলের সদস্যরা বিপথগামী হয়ে ওঠে। পাহাড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বেচা-কেনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে থাকে তারা।
আলীকদম উপজেলার পোয়ামুহুরী-করুকপাতাঝিরিসহ আশপাশের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের জানান দেয়। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্রো এবং জুন মাসে সংগঠনের সেকেন্ড ইন কমান্ড পালে ম্রো আলীকদমে আধিপাত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সংগঠনের ২৫ জনের মতো সদস্য খুন হয়েছেন। এমএনপি পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়।
মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের ধরতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা বান্দরবানের পাহাড়ে টানা অভিযান চালায়। এ সময় সংগঠনের শতাধিক সদস্য গ্রেপ্তার হন। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান, আর্থিক সংকট এবং নিজ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের অসহযোগিতাসহ টানাপড়েনের কারণে সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছে বলে জানান ম্রো জনগোষ্ঠীর কয়েকজন নেতা।