জাতীয় সংলাপের আহ্বান খালেদা জিয়ার
চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশ ক্রমাগত গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে। আমাদের কাছে দেশের স্বার্থ বড়, জনগণের স্বার্থকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি, সর্বদলীয় বৈঠকের কথাও বলেছি। আমি বারবার জাতীয় সংকট মোকাবিলায় জরুরিভাবে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি আন্তরিকভাবে; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য যে, সরকার আমাদের সে দাবির প্রতি এখন পর্যন্ত কর্ণপাত করেনি।’
‘সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারণ। সরকার নিজেই এই সংকট সৃষ্টি করেছে- যা ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক সংকটের সূচনা। এ সংকট উত্তরণে সরকারকে সময় থাকতেই এর উপায় বের করতে হবে। আমাদের দল মনে করে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনতিবিলম্বে একটি নির্বাচন আয়োজন এখন জরুরি।’
খালেদা জিয়া আশা করেন, ‘সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকালে সংকট উত্তরণে গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকোচন না করে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশকে উন্মুক্ত করবে দেশ ও জাতির স্বার্থেই।’
বিএনপির চেয়ারপাসন কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আজ ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন। তার মধ্যে রয়েছে- জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, সবপর্যায়ে বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীন বিবেচনাবোধে কাজ করতে উৎসাহিত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা না দেওয়া, দলীয়করণকৃত প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা, রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার সব রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া এবং মিথ্যা মামলা তুলে নিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে ফিরিয়ে দেওয়া।
এসব বিষয়ে একমত হওয়া গেলে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ম–ল্যবোধকেও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সংকটের কারণ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সরকারপ্রধান অচিরেই আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পর দেশে আজ এক সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত। যার ফলশ্রুতিতে শাসকদলের ক্ষমতানির্ভর দম্ভ আর প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে মিলে মিশে একনায়কতান্ত্রিক আচরণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারছে, এমনি ধরনের একটি পরিস্থিতিতে দেশ আজ গভীর সংকটেও নিপতিত।’
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুজন সদস্যের দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনাও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, ‘ঘরে-বাইরে এখন কেউই নিরাপদ বোধ করছেন না। চারদিকে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে, যেন সামনে ঘোর অন্ধকার!’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অসুস্থ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পুনরায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, এটি সরকারের চরম অমানবিক ও অসহিঞ্চু দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারের এ ধরনের দমন-নিপীড়ন থেকে দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারাও বাদ পড়ছেন না। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলা, চার্জশিট, কারাজীবন আর সরকারের দমননীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন। এ পরিস্থিতি দেশ-জনগণ-গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
বিএনপি একটি গণতন্ত্র পন্থার দল উল্লেখ করে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আমাদের দল কোনোভাবেই কোনো ধরনের উগ্রপন্থাকে সমর্থন করে না। সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু সরকার দেশে-বিদেশে বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী চরিত্রের কালিমা লেপনের যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে- তা দেশ-বিদেশে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এবং পাবেও না, বরং সরকারের ফ্যাসিবাদী রূপই আরো বেশি করে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’
ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কোনো হিংসাশ্রয়ী-অসহিষ্ণু রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবে না উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বাইরে কাজ করতে পারবেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীর আশু মুক্তির পাশাপাশি
তাদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।