দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলীতে শরীয়তপুরের দুই ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সংবাদ পৌঁছানোর পর নিহত দুই ব্যবসায়ীর পরিবার, স্বজনসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিসার ইউনিয়নের কাইছকড়ি গ্রামের মৃত শহর আলী মাঝির ছেলে উজ্জ্বল মাঝি (৩১) ও নড়িয়া উপজেলার কাপাশপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্যার ছেলে আলম মোল্যা (৩৫)। গত রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের হত্যা করা হয়।
নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দিন ধরে সেখানের সন্ত্রাসীরা উজ্জ্বল ও আলম মোল্যার কাছে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না দেওয়ায় তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের স্বজনরা দ্রুত তাদের মরদেহ ফিরে পেতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উজ্জ্বল মাঝি ১১ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন। সেখানে কেপ টাউনে একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন। উজ্জ্বল পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। ১১ বছরের মধ্যে বৈধ কাগজ না থাকায় তিনি বাড়ি আসতে পারেননি।
দেড় মাস আগে টেলিফোনের মাধ্যমে শরীয়তপুরের ডামুড্যার সুরভী নামের এক মেয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে উজ্জ্বলের বিয়ে হয়। দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে সুরভীকে তুলে আনার কথা ছিল। উজ্জ্বল রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। এমন সময় সন্ত্রাসীরা এসে চাঁদা না পেয়ে তাঁকে পরপর দুটি গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ সময় উজ্জ্বলের দোকানের কর্মচারী একই জেলার নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের কাপাশপাড়ার ইব্রাহিম মোল্যার ছেলে দুই সন্তানের জনক আলম মোল্যা দোকানের সঙ্গে থাকা বাসায় রান্না করছিলেন। সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে আলম মোল্যাকেও মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
আলম মোল্যা দেড় বছর আগে বাবার শেষ সম্বল এক টুকরো জমি বিক্রি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। তিনি তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁর মা নেই। বৃদ্ধ বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। আলম মোল্যার স্ত্রী রুমাসহ আফসা নামের চার বছরের এক মেয়ে ও হানিফ নামে আড়াই বছরের এক ছেলে রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা স্বজনদের মাধ্যমে এ সংবাদ শোনার পর উভয় পরিবার ও তাদের স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা মরিয়ম বিবি কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বারবার বিছানায় গড়িয়ে মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
অন্যদিকে আলমের স্ত্রী রুমা ও বোন নাছিমার আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। বাবা ইব্রাহিম কথা বলতে পারেননি। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে বুক চাপড়িয়ে কাঁদেন। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা খবর পেয়ে নিহতদের বাড়ি এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নিহতদের লাশ কেপ টাউন শহরের একটি হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের উভয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে আফ্রিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা নিহতদের পরিবারকে জানিয়েছেন।
নিহত উজ্জ্বল মাঝির ভাবি পারভীন আকতার বলেন, আমার দেবর উজ্জ্বল ১১ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা থাকেন। সেখানে মুদি দোকানে ব্যবসা করেন। বৈধ কাগজ না থাকায় বাড়ি ফিরতে পারেননি। কাগজ করার জন্য জমা দিয়েছেন। কাগজ হাতে পেলেই বাড়ি আসবেন বলে দেড় মাস আগে ফোনের মাধ্যমে তাঁর বিয়ের কাবিন হয়েছে। সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সরকারের মাধ্যমে তাঁর লাশটি ফিরে পেতে চাই।
নিহত আলম মোল্যার বোন পলি আক্তার বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাই আলম মোল্যা দেড় বছর আগে আমাদের একটু জমি ছিল, তা বিক্রি করে বিদেশে গেছেন। আমার ভাইকে সন্ত্রাসীরা বাসায় গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এখন আমাদের উপায় কী? এ সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি। এখন কীভাবে এরা বেঁচে থাকবে? কে করবেন তাদের দেখাশোনা? সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমার ভাইয়ের লাশটা যেন দেশের মাটিতে দাফন করতে পারি।’