নুসরাত হত্যা মামলা : পিবিআই প্রধানকে আদালতে হাজিরের আবেদন
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সাক্ষী ও জেরার প্রয়োজনের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারকে আদালতে হাজির করার আদেশ চেয়ে আবেদন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ।
এর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আজ সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলমের জেরা পঞ্চম দিনে আংশিক শেষ হয়।
মামলার জেরা চলাকালে ঢাকা থেকে আসা আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তদন্ত কর্মকর্তার জমা দেওয়া অভিযোগপত্রসহ বিভিন্ন কাগজের ওপর জেরা করেন। এ সময় তিনি পিবিআই প্রধানকে হাজির করার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক আবেদনটির শুনানি আপাতত স্থগিত করে বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে কাউকে আদালতে হজির করা হবে। তবে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষে আদালত যদি মনে করেন ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারকে আদালতে আনা প্রয়োজন তখন তিনি আদেশ দেবেন।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, পিবিআই প্রধান বনজ কুমার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার দুদিন আগে ঢাকায় পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে মামলার অভিযোগপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল, কীভাবে হত্যা করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। সেদিনের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কিত পত্রিকার কাটিং ও টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের ভিডিও ফুটেজ আদালতে জমা দিয়েছি। ডিআইজি বনজ কুমারের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরমায়েশি অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন। যাতে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে মনগড়া অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। অপর এক দরখাস্তে মামলায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছে সে তালিকায় নয়জন শিশু অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে সাক্ষী রয়েছে। যাদের শিশু আদালতে শিশুবন্ধব পরিবেশে সাক্ষ্য নেওয়ার কথা। তা করা হয়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহাজাহান সাজু বলেন, ‘নুসরাতের ছোট ভাই রায়হান ছাড়া কোনো সাক্ষী ১৮ বছরের নিচে নেই। তা ছাড়া যে ধারায় আসামিপক্ষের আইনজীবী দরখাস্ত দিয়েছেন আইনের সবশেষ সংশোধনীতে তা রহিত করা হয়েছে।’
আদালতের বিচারককে গেজেট দেখিয়ে ধারাটি সংশোধন হয়েছে মর্মে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে জানান।
বিচার শুরুর ৪৩ কার্যদিবসে ৯১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। শেষে মামলার সবশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীর জেরা আগামী তিন থেকে চার কার্যদিবস চলতে পারে। মামলার অভিযোগপত্রে ৯২ জন সাক্ষীর নাম দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ধার্য করা তারিখ আজ সকালে ফেনী কারাগার থেকে ১৬ জন আসামিকে আদালতে আনা হয়। দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়।
গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আরবি পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কৌশলে ডেকে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যান। পরে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পাঁচ দিন পর গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত। পরের দিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তাঁর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। পিবিআই ও পুলিশ এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ ১২ জন আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ২৯ মে দুপুরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কমকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহআলম আদালতে ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ মামলায় আটক থাকা অভিযোগপত্রের বাইরের পাঁচজনকে বিচারিক আদালত হত্যার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।