রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড : আরেক আসামির জামিন
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক এক আসামির (১৬) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার বিকেল ৪টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এ জামিনের আদেশ দেন।
এদিকে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর গতকাল মঙ্গলবার জামিন পাওয়া ওই আসামিসহ অপর ছয় অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি করা অভিযোগপত্রে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে আজকে জামিন পাওয়া কিশোরকে।
গত ৮ জুলাই ওই আসামিকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। পরে ওই দিন বিকেলে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ড শেষে আবার একই আদালতে হাজির করে দ্বিতীয় দফায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত আবারো পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে গত ১৮ জুলাই কিশোর আসামি বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর থেকেই কারাগারে ছিল সেই আসামি।
এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু শুনানি শেষে ওইদিন আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর গত ১ আগস্ট বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য মিস কেস দাখিল করেন তিনি। গত ১ সেপ্টেম্বর এই মিস কেসের আংশিক শুনানি হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আদালত ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দিন ধার্য করেন। পরে বুধবার বিকেলে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালত জামিনের আদেশ দেন।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরের দিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৯ জুলাই তাঁকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়।
রিফাত হত্যা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কিশোর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আলাদা সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট বাবার জিম্মায় থাকা এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ১৯ বছর বয়সী মিন্নি জামিনে থাকা অবস্থায় তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এ ব্যত্যয় ঘটলে তাঁর জামিন বাতিল হবে।
পরে গত রোববার হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন। সোমবার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। পরদিন মঙ্গলবার হাইকোর্টের জামিনের আদেশের কপি বরগুনা জেলা কারাগারে পৌঁছানোর পর মিন্নি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুক্তি পান।